চট্টগ্রামে রেলওয়ে মেডিকেলে সুইপারসহ ২২৩ পরিচ্ছন্নর্মীর পোশাক তৈরীর আগেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মোরশেদ ফ্যাশনকে গত জুন মাসে বিল প্রদান করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চতুর্থ শ্রেণীকর্মীদের পোশাক বাবদ সরকারের বরাদ্দ দেয়া টাকা সিআরবির বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. চিন্ময় বিশ্বাস এবং স্টেনোগ্রাফার মো.সোহেল এবং ঠিকাদার সুব্রত পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলশ্রমিক নেতা আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম এবং অপর এক নেতা বলেন,ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক শুভকে অগ্রিম বিল পাইতে স্টেনো সোহেল কূটকৌশল করে ডিএমওকে ম্যানেজ করা হয়েছে। তারা বলছেন,বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. চিন্ময় বিশ্বাস শ্রমিকদের পোশাক তৈরীর আগেই ঠিকাদারকে বিল প্রদান করে রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।
বিগত বছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ অধিশাখার বরাদ্দর পরিপত্রর নথিতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নকর্মীদের পোশাক বাবদ জনপ্রতি ৭২৫০ টাকা করে অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে। একই শ্রমিককে পোশাক বাবদ চলতি বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৯০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল অফিসার ডা চিন্ময় বিশ্বাস। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস। তিনি বলেন,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের পাশাপাশি কি রংগের পোশাক দেয়া হবে সেটিও নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
চিন্ময় জানান,পোশাক বাবদ এবছর ১২লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু একই মন্ত্রণালয় গত বছর বরাদ্দ দিয়েছে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা। এখানে ডিএমও চিন্ময় বিশ্বাস ৪ লাখ ৭৫০ টাকা তথ্য গোপন করেছেন। শ্রমিকদের পোশাক বাবদ টাকা কম দেয়ার অভিযোগ ডিএমও স্বীকার না করলেও তিনি বলেন,লাকসাম,কুমিল্লা,চাঁদপুর এবং পাহাড়তলীর কোন শ্রমিক টাকার বিষয়ে অভিযোগ করেনি। শুধু সিআরবির কয়েকজন অভিযোগ তুলেছে।
জনপ্রশাসনের দেয়া বরাদ্দের কপি প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে সরবরাহের কথা দিয়েছিলেন ডিএমও। ঘটনার পেঁচে পড়ে তা আর সরবরাহ করেনি। পরিশেষে তিনি বলেন,যা মনে চায় তাই লিখেন। চিন্ময় বিশ্বাস দাবি করেন এবছর চাঁদা না দেওয়ায় নানা অভিযোগ তুলেছে শ্রমিক নেতারা। তিনি দাবি করেন বিগত সময়ের চেয়ে এবছর সুসমবন্ঠণ হয়েছে।
অপরদিকে বিশ্বাস ঘাতকতার অভিযোগ স্টেনোগ্রাফার মো.সোহেলের বিরুদ্ধে। মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিও ফুটেজে সোহেলের ঘাতকতার প্রমানও মিলেছে। রাতের-আঁধারে চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে শ্রমিকদের পোশাক বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রদানের কথা স্বীকার করেছে মির্জাফর সোহেল। যার ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ রয়েছে। দুর্নীতির মূলহোতা স্টেনোগ্রাফার সোহেল দীর্ঘ বছর যাবত একই চেয়ারে অধিষ্ঠিত রয়েছে। তার দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের অপরাধ করতে উৎসাহ করেন তিনি।
গত নিয়োগে ৫ জন স্টেনোগ্রাফার নেওয়ার সার্কুলার দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সোহেল পরিবারের ভাই-ভাবিসহ ৪ জন নিয়োগ পায়। এর পর সোহেলকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয় না। যত বড় কঠিন কাজই হোক সব যেন তার কাছে পানির মত সহজ হয়ে যায়। এর আগের ডিএমও ফাতেমা সোহেলের বিরুদ্ধে পূর্বের জিএমের কাছে অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন। অদৃশ্য হয়ে যায় সেই অভিযোগ। ডিএমও বদলি হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন স্টেনোগ্রাফার সোহেল।
শ্রমিক নেতা স্টুয়ার্ড বলেন,সোহেলকে বদলি করলে চট্টগ্রামে দুর্নীতি কমে যাবে। অপরাধের মূলহোতা স্টেনোগ্রাফার। অভিযোগের বিষয় জানতে সোহেলকে একাধিকবার ফোন এবং মেসেস করা হয়। কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। সোহেল প্রতিবেদকের নাম্বার ব্লাকলিস্ট করে রাখে। মিডিয়া কর্মীর নাম শুনলে তার নাম্বার ব্লাকলিস্ট করে রাখে।
ঠিকাদার শুব্রত চৌধুরী শুভকে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। পোশাক কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে পূর্বের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর শশুরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তাঁকে আর কোন প্রশ্ন করা হয়নি।
রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার পোশাকের টাকা বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদকে বলেন,দুর্নীতির প্রমান পেলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান,অর্থ ছাড়ের শ্রমিক কম-বেশি হলে টাকার পরিমান বেশ-কম হবে। তবে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না বলে হুশিয়ারি দেন জিডি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন কি না জানতে রেলসচিব মো.সেলিম রেজাকে এসএমএস করা হয় এবং ফোনে উত্তর চাওয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি এবং এসএমএসের উত্তর ও দেননি।