শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের আড়াইআনীতে বোতলভাঙ্গা মোড়ের পূর্বে অবস্থিত হরিজন পল্লী ব্রীজের সন্নিকটে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে বসবাস করছে ১৪ টি ভূমিহীন পরিবার। যাদের প্রকৃত অর্থে মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই নেই। ভুমিহীন পরিবারগুলো অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অর্ধশতাধিক বৃদ্ধ-নারী-শিশুর জীবন কাটছে মানবেতরভাবে। ওই সড়কে মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে।
বসবাসকারী পরিবারগুলো জানায়, পৌরশহরের ওই সড়কে বসবাসরত পরিবার গুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে তাদের যে সমস্ত মৌলিক সমস্যাগুলি রয়েছে এরমধ্যে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। নেই থাকার কোন ব্যবস্থা। এরপর রয়েছে উচ্ছেদ হওয়ার আতঙ্ক। কারণ সড়কের উপর টিন শেড ঘর করে পরিবারগুলো বসবাস করায় পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে হরিজন পল্লী সড়কে চলাচল। অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজ। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে সড়কটি দখল মুক্ত করে সাধারণের চলাচলের উপযোগী করার। নালিতাবাড়ীর কাকরকান্দি সড়কের চকপাড়া মোড় থেকে তিন ঠেইংগা বিল সংলগ্ন হালুয়াঘাট সড়কের সংগে প্রায় একহাজার মিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হয় ষাটের দশকে। সে সময় অবিভক্ত নালিতাবাড়ী-কাকরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহের আলী সরকার কাঁচা সড়ক নির্মাণ করেন। দীর্ঘদিন বিলের উপর কোন ব্রিজ না থাকায় সড়কটি সাধারণের চলাচলে খুব একটা কাজে আসেনি। ১৯৯৫ সনে নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের আংশ পৌর সভার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সনে পৌর মেয়র মরহুম আবদুল হালিম উকিলের উদ্যোগে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। উদ্যোগ নেওয়া হয় ছোট এই বিল টিকে ঘিরে একটা মিনি পার্ক করার। যাতে নির্মল পরিবেশে লোকজন প্রাণভরে নিশ^াস নিতে পারে। কিন্তু সড়কটিতে ওই পরিবারগুলোর আবাস হওয়ায় সব উদ্যোগ থেমে গেছে। শ্রীহীন হয়ে পড়েছে সড়ক এবং ব্রিজ। ভূমিহীন ওই পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করে সড়কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
সেখানে বসবাস করা পঞ্চাশোর্ধ জাহানারা বেগম বলেন, গড়কান্দা মহল্লায় ভোগাইনদীর পাড়ে আমাদের এককালে বসতবাড়ি ছিল। পাহাড়ি নদী ভোগাইয়ের ছোবলে সর্বস্ব হারিয়ে তারা সবাই ভূমিহীন হয়ে পড়ে। অনেক পথ পেরিয়ে সর্বশেষ আশ্রয় পাই পৌর শহরের ওই জায়গায়। পৌরসভা হতে ত্রাণের টিন দিয়ে ঘর তুলে আমাদের সাময়িক ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এখানেও পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে চললেও, স্থায়ীভাবে পুর্নবাসন করার কোন উদ্যোগ নেই।
এখানকার বাসিন্দা সামেদুল ইসলাম ও নুর ইসলাম বলেন, এখানের বাসিন্দাদের প্রায় সব্ইা পৌরসভাসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে ক্লিনার হিসেবে কাজ করি। বিদ্যুৎ নেই, দূর থেকে পানিয় জল এনে এবং ময়লা আবর্জনা যুক্ত ডোবায় গোসল করে তাদের দিন কাটে। এর মধ্যে আবার এখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করে সড়কটি সর্বসাধারণের চলাচল উপযোগী করার আওয়াজ উঠেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে পরিবারগুলো কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিব সে রকম কোন জায়গা নেই। তাই সীমাহীন দুশ্চিন্তায় দিশেহারা আমরা।
৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার জহুরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবগত আছে। বিশেষ করে এটা হরিজনদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু যাদের জন্য করা তারাই তো নেই। তাই পৌরসভা হতে চিন্তা করা হয়েছে করুনা শেষ হলে পৌরসভা হতে টেন্ডার করে সড়ক চলাচল ঠিক করা ও তাদের ব্যবস্থা করা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আঃ হান্নান বলেন, আমরাও বিষয়টা জানি। যেহেতু সেটি পৌরসভার আওতাধীন। তবে সে ক্ষেত্রে তারা যদি উপজেলার কোথাও যেতে রাজি হয় তাহলে আমরা এর একটা ব্যবস্থা করবো।