করোনা মহামারীতে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। আয় কমে যাওয়ায় গত বছর থেকেই ওসব প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ পরিচালন ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার মধ্যে ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাড়তি চাপে রয়েছে। ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশেরই প্রতি মাসেই ভবন ভাড়া বাবদ বকেয়া অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়কে খরচ কমাতে ভাড়া ভবন ছাড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার আগে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে হারে শিক্ষার্থী ভর্তি হতো, এখন তার সিকি ভাগও নেই। পাশাপাশি পুরনো শিক্ষার্থীরাও টিউশন ফি নিয়মিতভাবে পরিশোধ করছে না। ওসব কারণে গত এক বছরে বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আয়ে ধস নেমেছে। তাই ব্যয় কমাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই ভাড়া করা ভবন ছেড়ে দিচ্ছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া ভবন ছাড়েনি। কিন্তু তারা ওসব ভাড়া ভবনের ভাড়া নিয়ে চাপে রয়েছে। ঢাকার বাইরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভবনের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে আর্থিক সংকটে রয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর বনানীতে তিনটি ভবনে কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির স্টার টাওয়ারে ৭ মাসের, টেক্সটাইল ভবনে ৫ মাসের ও এইচবিআর টাওয়ারে এক মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। করোনায় সৃষ্ট আর্থিক সংকটে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি ভবন ছাড়তে হয়েছে। একইভাবে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ পরিচালন ব্যয় কমাতে ভাড়া নেয়া ভবন ছেড়েছে। ওই বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর গ্রীন রোডে দুটি ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয়সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি দুটি ভবনই ছেড়ে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি। একইভাবে ব্যয় কমিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের জন্য ভাড়া নেয়া বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া বরিশালে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনটি ভাড়া করা ভবন রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরো দুটি ভাড়া ভবন রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ ৬-৭ মাস ধরে এর কোনোটিরই ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না।
সূত্র আরো জানায়, বড় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই একই ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া টিউশন ফি। কিন্তু এক বছর ধরে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না বললেই চলে। পাশাপাশি আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও অনেক ধরনের সমস্যায় রয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে শিক্ষার্থীদের ফির জন্য চাপ দিতে পারছে না, অন্যদিকে বেতন-ভাতা দিতে না পারায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনায় সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে খুব কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কষ্টে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই তা পারছে না। একদিকে ব্যয় কমানোর চাপ, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ ভাড়া ভবন ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অবকাঠামোর আকার কমিয়ে এনেছে। যদিও ধারণা করা হয়েছিল এইচএসসিতে অটো পাস দেয়ার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি শিক্ষার্থী পাবে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেটে ভর্তি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসেই বড় আকারের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন জানান, করোনার মধ্যে আয় কমে যাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যয়সংকোচন নীতিতে চলতে হচ্ছে। অন্য অনেক খাত প্রণোদনা পেলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনায় সৃষ্ট তীবৃ আর্থিক সঙ্কটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পায়নি। ঋণের জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি। ভাড়া পরিশোধ না করায় ভবনরা মালিক নোটিশ করছে। তাই অনেকেই ভবন ছেড়ে দিয়েছে। তেব বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা এলে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় ভবন ভাড়া নেবে।