কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় ৩৫ বছর আগের এক মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমির ভূয়া দলিল সম্পাদন হওয়ায় কুড়িগ্রাম আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতের নির্দেশে কুড়িগ্রাম সিআইডি পুলিশ মঙ্গলবার (৬জুলাই)আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
মামলার বাদী এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার বদরপুর গ্রামের মৃত নজির হোসেনের স্ত্রী দৌলতন নেছা গত ৩৫ বছর আগে মারা যান। দৌলতন নেছা জীবিত থাকাবস্থায় তিনি ঐ গ্রামের তার অল্প পরিমান জমি প্রতিবেশী মজিবর রহমানের নিকট বিক্রি করেছিলেন। দৌলতন নেছা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর ওই এলাকা নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে মৃত দৌলতন নেছার পরিবার উপজেলার বটতলা (কারিগরপাড়া) গ্রামে এবং মজিবর রহমানের পরিবার টাংগালিয়াপাড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
মজিবর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩২), সে তার মাতা জহুরা খাতুন (৬০) কে ভূয়া দৌলতন নেছা সাজিয়ে দলিল লেখক মোঃ নূরুন্নবী (৩৬) মাধ্যমে গত ০৩/০২/২০২০ ইং তারিখ চর রাজিবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মৃত দৌলতন নেছা-র বদরপুর গ্রামের ৫০ শতক জমি নিজ (ইসমাইল) নামে দলিল সম্পাদন করে (বিতর্কিত দলিল নং-১৩১/২০)। জমি দলিলের পর ০৭/০২/২০২০ ইং তারিখ ওই জমির দখল নিতে গেলে বটতলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আবদুল করিম (৪৭) (মৃত দৌলতন নেছার নাতি) জমির দলিল-পত্র দেখতে চাইলে ইসমাইল হোসেন ওই সদ্য দলিলকৃত জমির অনুলিপি দেখান এবং জমি জবর দখল করেন। ওই দলিল ভূয়া অনুমান হ’লে আবদুল করিম চর রাজিবপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রাথমিক যাচাই করেন এবং ওই (ফেব্রুয়ারী) মাসেই সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (চর রাজিবপুর উপজেলা, কুড়িগ্রাম)-এ আট জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলার অভিযোগটি যাচাইয়ের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের গোয়ন্দা সংস্থার (সিআইডি) ওপর নির্দেশ আসে। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক এম এ ফারুক দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৬ জুলাই সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (চর রাজিবপুর উপজেলা) এর নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
মৃত দৌলতন নেছার নাতি ও ওই মামলার বাদী আবদুল করিম জানান, চর রাজিবপুর উপজেলার বদরপুর গ্রামে আমার দাদীর নামীয় আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য বদরপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন তার মাতা জহুরা খাতুন দলিল লেখক মোঃ নূরুন্নবী যৌথভাবে একটি ভূয়া দলিল সম্পাদন করে এবং ওই দলিল দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি জবর দখল করেছে। আদালতের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে আমি ওই জমি ফেরত পেতে চাই।
শুক্রবার(৯জুলাই) কুড়িগ্রাম জেলা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক এম এ ফারুক জানান, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবরেটরিতে দৌলতন নেছা জীবিত অবস্থায় সম্পাদনকৃত জমির দলিলে আঙ্গুলের ছাপ এবং ০৩/০২/২০২০ ইং তারিখে সম্পাদনকৃত দলিলে দৌলতন নেছার আঙ্গুলের ছাপের মধ্যে মিল পাওয়া যায় নাই। কিন্তু ওই বিতর্কিত দলিলে দৌলতন নেছার আঙ্গুলের ছাপ এবং ১৫/০৩/২০২১ ইং তারিখে আদালতের সম্মুখে নেওয়া জহুরা খাতুনের (২নং আসামী) আঙ্গুলের ছাপের মধ্যে মিল পাওয়া গিয়েছে। আমি গত ৬জুলাই আমার তদন্তকৃত ও প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনটি বিজ্ঞ আদালতের নিকট জমা দিয়েছি।