পুঠিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর ভেতরে নির্মাণ কাজে তুটি থাকার কারণে,কয়েকটি ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ফাটল ঠিক করতে উপজেলা প্রশাসন তোড়জোড় শুরু করেছেন। এ ঘটনায় আশ্রয়িতাদের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে নতুন ঘর পাওয়ার পরও আশ্রয়ণ ঘরে বসবাস করতে চাচ্ছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগ অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এবং নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণের কারণে ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরো বর্ষা শুরু হলে নির্মাণ করা ঘরগুলো ধসে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেলে উপজেলার মধুখালি এলাকায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ১৩টি পরিবারের মধ্যে নির্মিত ঘরের মালিকানা ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে নির্মাণ করা ঘরগুলো কাজ এখনো শেষ হয়নি। এর ভেতরে কয়েকটি ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের অধিনে ‘ক’ শ্রেণীভূক্ত জমিতে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ৬টি ইউনিয়ন এলাকায় দ্বিতীয় দফায় ১১০টি ঘর নির্মাণ কাজ হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রতিটি পবিরারের জন্য দুটি রুম বিশিষ্ট পাঁকা ঘরের মধ্যে আরো রয়েছে একটি বার্থরুম ও রান্নার করার স্থান রয়েছে। সেই সাথে ওই পরিবার গুলোর আধুৃনিক সুবিধার জন্য থাকছে আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ, পানি সরবরাহের পাশাপাশি ওই এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে আলোকবার্তি। আর তাদের যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নতুন সড়ক। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় ঘর নির্মাণ কাজেও কোনো গাফিলতি বা অনিয়ম করা হয়নি। আমার আব্বা মারা যাওয়ায় কিছুদিন ছুটিতে ছিলাম। ঘর গুলোতে কিভাবে ফাটল ধরেছে তা আমি সরেজমিনে না দেখে বলতে পারবো না। তবে সকল ঘরে সঠিক গুনগত মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বর্ষা শুরু হওয়ায় নির্মিত এলাকায় মাটি ভরাট কাজ এখনো শেষ করা যায়নি। আবদুর রাজ্জাক নামের একজন ঘর নির্মাণকারী কারিগর বলেন, প্রথম পর্যায়ের ঘরগুলোর তুলনায় দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ করা ঘরগুলোর গুনগত মানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এর কারণ, যেখানে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ফসলের ক্ষেত ছিল। আর ওই নরম মাটিতে ঘরের ভিত শক্ত না করে ইটের গাঁথুনি শুরু করা হয়েছে। এরপর ফাটলকৃত ঘরগুলো নির্মাণের সময় সিমেন্টের পরিমাণ অনেক কম দেওয়া হয়ে ছিল। অতিরিক্ত বালু দেওয়ার কারণে, ঘরের দেয়াল গুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে ফাটল স্থানগুলো সিমেন্ট-বালির ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। মধুখালি এলাকার জামাল উদ্দীন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গৃহহীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রথম দফার ঘর নির্মাণ অনেক ভালো হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায় ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। প্রথম দফার চেয়ে সরকার দ্বিতীয় দফায় টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন অথচ কাজ হয়েছে সব চেয়ে খারাপ। যার কারণে নির্মাণ শেষ হতে না হতে বেশীর ভাগ ঘরের দেয়াল গুলোতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘরগুলো সঠিক ভাবে নির্মাণ কাজ না হলে,ব্যাপক বর্ষা দেখা দিলে ধরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে মধুখালি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার একাধিক আশ্রয়িতারা বলেন, আমাদেরকে ঘরের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘরগুলো নির্মাণ কাজ পুরো শেষ হয়নি। তারপর মাটি ভরাট ও পায়খানা নির্মাণ কাজ শেষ করেনি। তার মধ্যে আমরা বসবাস শুরু করার আগেই বেশীর ভাগ ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। মনে হয়, বর্ষার পানি বেড়ে গেলে ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। এখানে অনেকে প্রাণ ভয়ে বসবাস করতে আসতে চাইছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন,ঘরগুলো নির্মাণ করতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার চেয়ে ১০ হাজার টাকা ঘর প্রতি আরো বেশি ব্যয় করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের প্রতিটি জিনিসপত্র উন্নতমানের ব্যবহার করা হয়েছে। ঘরে এলাকাবাসীরা ফাটলের ব্যাপারে অভিযোগ উঠানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এলাকার কিছু মানুষ অহেতুক গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। যে স্থানটিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় কিছু সমস্যা রয়েছে। তারপর তাড়াহুড়া করে ঘর নির্মাণ করলে সমস্যা হবে। তাই আমরা এখনো পর্যন্ত ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের ঘর বুঝে দেওয়া হয়নি। ঘরের সঠিক করার জন্য,আমি প্রতিদিন রাত ১০টা পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পে সময় ব্যয় করে আসছি। যে ফাটল দেখা দিয়েছে। তা হলো পায়খানার স্লাভ বসানোর গর্তের কারণে। দেয়ালে কিছু অংশ ফাটল দেখা দিয়েছিল। পরবর্তিতে ওই স্থান গুলো সংস্কার করা হয়েছে। তবে বাড়িগুলো ঝুকিপূর্ণের ভেতরে নেই। উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রতিটি ঘর তদারকি করানো হয়েছে।