নদীর একুল ভাঙ্গে, অকুল গড়ে এইতো নদীর খেলা। এক সময়ের ঘনবসতি ও কোলাহল মুখর গ্রামটি আজ বিলীনের পথে। আর মাত্র ৪টি পরিবারের বসতী তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হলেই মিশে যাবে পীরগাছার চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রাম। ভাঙ্গনের মুখে পড়ে আছে এ গ্রামের একমাত্র স্কুল চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদী থেকে মাত্র ১৫ মিটার দুরে এ স্কুলটি রক্ষায় শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন, স্কুলের শিক্ষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা। দিনে-রাতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ওই গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি। ভাঙ্গনের ফলে এসব বাড়ির লোকজন এখন আশ্রয়হীন। তবে আরো বেশি পরিমান জিও ব্যাগ ফেলার দাবি করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা ছাওলা ইউনিয়নের চর দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে রাক্ষসী তিস্তা নদী। গ্রামটিতে বাড়িঘর ছিল ঘনবসতি। এসব বাড়ির শিশুদের মেধা বিকাশে পাশেই ১৯৯০ সালে গড়ে তোলা হয়েছে চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ২০১৪ সালে একবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বর্তমান স্থানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে একটি সু-স্বজ্জিত আধুনিক ভবন গড়ে তোলা হয়। কোলাহলে মুখর থাকতো গ্রাম ও স্কুলটি। কিন্তু পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী গিলে খেয়েছে গ্রামটির বেশির ভাগ বসতি। চলতি বছরেই ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৫০টি বাড়ি। আর মাত্র ৪টি বসত বাড়ি ও একমাত্র স্কুলটি ভেঙ্গে গেলেই নিশ্চিহৃ হয়ে যাবে গ্রামটি। এদিকে নদী আস্তে আস্তে স্কুলের কিনারে চলে আসায় নরেচরে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। স্কুলটি শেষ রক্ষায় চলছে তোড়জোর। রাতে এবং দিনে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবুও যেন কাজ হচ্ছে না। এলাকাবাসীর দাবি গত বছরও বিদ্যালয়টি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছিল। তখন ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শেষ মুহুর্তে কি বা করার।
নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া খয়বার আলী, তালেব মিয়া, আমজাদ হোসেন, মাজেদ আলী বলেন, সময় মতো উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের আশেপাশের বাড়িঘরও রক্ষা পেত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণে আজ আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। গত ৫ বছরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ৫ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙ্গনের শিকার সাইফুল ইসলাম, ফুলমতি বেগম, আনিছুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্টরা অপরিকল্পিতভাবে দুইটি বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্বের গ্রামগুলো রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙনের কবলে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। আমরা ছাওলার বোল্ডারের মাথা থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করার দাবি করছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, নদী একেবারে স্কুলের কিনারে চলে এসেছে। স্কুলটি রক্ষায় রাতে-দিনে কাজ করা হচ্ছে। আরো ৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা দরকার। তাহলে হয়তো স্কুলটি রক্ষা করা যাবে।
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, স্কুলটি রক্ষায় জোর চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকেীশলীর সাথে কথা বলে আরো ব্যাগের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করার জন্য চেয়ারম্যানকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে।