নিরপতি কোচ (৩৮) মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তাকে এক যুগ শিকলবন্দি করে রেখে ছিলেন তার পরিবার। আদিবাসী এই নারীর বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের নওকুচি গ্রামে। তার স্বামী সতেন্দ্র কোচ প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন।
জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া নিরপতি কোচের সংসারে অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা নিত্যসঙ্গী। একবেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা উপোষ যায়। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন তাদের। স্বামী হারা নিরপতি বৃদ্ধা মা পাতিশ্বরী কোচ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। জমিজমা, সহায়-সম্বল নেই বললেই চলে। শিকলবন্দি মেয়ের মুখে একবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে দ্বারে দ্বারে হাত পাতেন তিনি। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারি ভাতার একটি কার্ড মেয়ের নামে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মা।
গত বছরের জুলাই মাসের দিকে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিরপতি কোচের অসহায়ত্ব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ তার চিকিৎসার দায়িত্বসহ তাকে ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি অবস্থান করছেন। ওই সময় তার বসবাসরত গৃহের অবস্থা দেখে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে তাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের তত্ত্বাধানে ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠেীর মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ পাওয়া ১০টি ঘর থেকে একটি সেমি পাকা নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে নিরপতি কোচকে। তার নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ১১ জুলাই বিকালে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদের নির্দেশে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন নিরপতি কোচের বাড়িতে গিয়ে ঘর নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকসি, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ স্যারের নির্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে নরপতি কোচকে একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তার ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’