নওগাঁর মহাদেবপুরে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রতিদিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন। সকাল থেকে সারাদিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে যারা লকডাউন অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসছেন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন না, দোকান খোলা রাখছেন, লকডাউনকে পুঁজি করে যারা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি নিচ্ছেন, পশুহাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টোল আদায় করছেন, এমনকি যারা মাদক বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল ও জরিমানার আদেশ দিচ্ছেন।
সোমবার (১২ জুলাই) তিনি উপজেলা সদর, এনায়েতপুর ও মহিষবাথান মোড়ে অভিযান চালিয়ে ৬টি মামলায় মোট এক হাজার ১৭০ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। আগের দিন রোববার তিনি উপজেলা সদর, খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন, খাজুর মোড়, চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব বাজার প্রভৃতি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৮টি মামলায় মোট এক হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। মাঝে মাঝে তিনি নানান মানবিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এদিন দুপুরে তিনি বাগডোব থেকে ফেরার পথে গুপিনাথপুর নামক স্থানে একজন মোটরসাইকেল আরোহিকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয়রা জানান, লকডাউনে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তাকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছেনা। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন এসময় নিজের গাড়ি থেকে নেমে এসে ওই আহত ব্যক্তিকে তার গাড়িতে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেন। এই ঘটনায় এলাকার জনমনে দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা অত্যন্ত সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারি এই ম্যাজিস্ট্রেটের এলাকায় আগমনের খবরে সকলেই তটস্থ হয়ে পড়তেন। সেই ম্যাজিস্ট্রেটের এই মানবিকতায় তারা মুগ্ধ হন।
আহত ব্যক্তি নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডলের ছেলে মতিউর রহমান (৪৫) জানান, আত্মীয় বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে তিনি নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি আমগাছে ধাক্কা লেগে মারাত্মক আহত হন। এতে তার মোটরসাইকেল দুমড়ে মুচড়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করলেও যানবাহনের অভাবে তাকে হাসপাতালে নিতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় মানবিক ম্যাজিস্ট্রেট এসি ল্যান্ড আসমা খাতুন তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। এজন্য তিনি তাঁর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহাদেবপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, আহত মতিউরের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুন বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে ফেরার পথে একজন আহত ব্যক্তিকে দেখতে পান। যানবাহনের অভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছিল না। মানবিক কারণে তিনি তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। এটা তিনি তাঁর স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও জানান।#