পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদ নগর-দিঘীরপাড় পাকা সড়কটি। এতে সৃষ্ট খালের ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার ১১ দিন অতিবাহিত হলেও সেখানে নির্মাণ হয়নি সেতু। শেষ পর্যন্ত নিজেদের উদ্যোগে প্লাস্টিকের ২০টি ড্রামের ওপর প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন স্থানীয় মানুষ।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিকালে সাঁকোটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতে প্রায় তিন হাজার মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। তবে ওই স্থানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ১৩ দিন ধরে প্লাস্টিকের চারটি ড্রাম ও বাঁশের তৈরী ভেলা দিয়ে খাল পারাপার হচ্ছিলেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত ২৮ জুন টানা তিনদিনের ভারি বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ উপজেলার দিঘীরপাড় মধ্যপাড়া এলাকায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে নি¤œাঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। একই দিনে আহাম্মদনগর-দিঘীরপাড় পাকা সড়কের দিঘীরপাড় মধ্যপাড়া এলাকার প্রায় ৮০ ফুট পাকা সড়ক ভেঙে যায়। এতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
গত ৩ জুলাই বিকালে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, ইউএনও ফারুক আল মাসুদ, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, সদর ইউপি সদস্য (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) আবদুল কুদ্দুস ওই স্থানটি পরিদর্শন করেন। এ পথে চলাচলকারীদের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহৃত রাস্তা মহারশ্মি নদীর বাঁধও ভেঙে যাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য সদর ইউপি সদস্য (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) আবদুল কুদ্দুসকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়ার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও ওই স্থানে কোনো কাঠের সেতু বা বাঁশের সাঁকো নির্মিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এলকাবাসীর কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ দিয়েছেন টাকা আর কেউ দিয়েছেন স্বেচ্ছাশ্রম আর এভাবেই সবাই মিলে প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য সাঁকোটি নির্মাণ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়া বলেন, আমরা ১৩-১৪ দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। গত ১০ দিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও স্যারসহ আরও অনেকেই এ স্থানটি পরিদর্শন করেন। ওই সময় একটি কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এরপর একজনেরও আর দেখা পেলাম না। তাই এলাকাবাসীরা সবাই মিলে গত দুইদিন ধরে বাঁশ ও টাকা উত্তোলন করে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করলাম। তবে ওই স্থানে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) আবদুল কুদ্দুস বলেন, বরাদ্দের তিনদিন পর প্রকল্পের কাগজ হাতে পেয়েছি। তাতে ৩৬টি সিমেন্টের খুঁটি ধরা হয়েছে। মিস্ত্রি দিয়ে খুঁটি তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাঠেরও অর্ডার দেওয়া হয়েছে। খুঁটি শুকাইতে সময় লাগবে। আশা করছি ঈদুল আযহার দুই-তিন দিনের মধ্যেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
এলজিইডির ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, ভেঙে যাওয়া সড়কটিতে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম বলেন, খোঁজ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজের গতি বাড়ানো হবে।