রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও রোগটিতে সংক্রমণের লাগাম যেন কোনভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছেনা। গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে প্রাণ ঝরেছে আরও ২৫ ব্যাক্তির। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এদের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৭ জন করোনায় পজেটিভ ছিল এবং অন্য ১৮ জন রোগটির উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এ নিয়ে চলতি মাসেই হাসপাতালটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৪৮ জন। এর আগে গত জুন মাসে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৪০৫ জন। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার এসেছে ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ১২ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩, নওগাঁর ২, পাবনার ৩, নাটোরের ৩, কুষ্টিয়ার ১ ও যশোর জেলার ১ জন। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী। এদের মধ্যে ৯ জনের বয়স ৬১ বছরের উপরে, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৩ ও ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের রয়েছেন ১ জন।
পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭২ জন। আর একই সময় সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৪ জন। আর একই সময়ে হাসপাতালটিতে করোনায় থাকা ৪৫৪ বেডের বিপরীতে চিকিৎসাধীন আছেন ৫০০ জন। বাকিদের করোনা ওয়ার্ডের বারান্দা ও মেঝেতে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও ২০ শয্যা বিশিষ্ট আইউসিইউতে চিকিৎসাধীন সকলেই করোনায় আক্রান্ত।
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, রাজশাহীতে টানা চার দিন ধরে বাড়ছে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে এই জেলার ৪৩০ টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৯ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যা আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার এসেছে ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগের দিন সোমবার সংক্রমণের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এদিকে করোনা সংক্রমনের উর্ধ্বগতি রোধে সারা দেশের ন্যয় গত ১ জুলাই থেকে রাজশাহীতেও চলছে কঠোর লকডাউন। তবে কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে মহানগরী জুড়ে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তায় বের হচ্ছে। এছাড়াও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ স্থানেই আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে কৈফিয়ত দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্টেট আবু আসলাম জানান, কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি রাজশাহীতে ১১ প্লাটুন সেনা, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও মাঠে রয়েছে ২২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন অমান্য করে রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদকালে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বা জরুরী প্রয়োজন ছাড়ই বের হয়েছে এমনটি বোঝা গেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।