মহামারী করোনায় জীবন যুদ্ধে থেমে গেছে আছিয়া নামের চার সন্তানের এক জননীর। ২ ছেলে ২ মেয়ে রেখে স্বামী মারা গেছে গত বছর। গরমের এই সময়ে বিদ্যুৎ বিহীন এক কাঠার ভিটে মাটির জমিতে মাটির তৈরি ঘরে এক খাটে ৫জন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বসবাস করছে জীবন সংগ্রামী এক জননী। করোনা কালীন সময়ে কোন কাজ নেই। তাই কোন আয়ও নেই। খাবারের নেই কোন নিশ্চয়তাও। করোনার এই কঠিন সময়ে বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য প্রতিদিন কারও না কারও কাছে হাত পেতে খাবারের সন্ধান করতে হচ্ছে তাকে।
এলাকাবাসী ও আছিয়া খাতুন জানায়, আছিয়া খাতুন (৪০) বসবাস করছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রুপনারয়নকুড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাগিচাপুর গ্রামে। বর্তমানে আছিয়া খাতুনের ২ মেয়ে বড় এবং ২ ছেলে ছোট। এর মাঝে বড় মেয়েটি তানিয়া (১৪) ৭ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। ছোট মেয়েটা সনিয়া (১১) ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়ছে। ছোট দুই ছেলে আসওয়াদ (৬) আবদুল্লাহ (৪) মায়ের সাথে। গত বছর স্বামী ইকবাল হোসেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হলে সে মৃত্যু বরণ করে। স্বামীর চিকিৎসা করতে গিয়ে তার ১লাখ টাকার টাকার উপড়ে ধার কর্জ করতে হয়েছে। ঋনের চাপও রয়েছে। ৪ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আছিয়া খাতুন। স্বামী ইকবাল হোসেন জীবিত থাকাকালীন সময়ে নালিতাবাড়ীর একটি রাইস মিলে কাজ করতেন। পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস ছিল দৈনিক কর্ম দিবসের বেতনের উপর। ইকবাল হোসেন মারা যাওয়ার পর পরিবারটিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে থাকা খাওয়ার অসুবিধা। একটি ভাংগা চৌকি ঘরে থাকলেও ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর দিনে তা নড়াচড়া করার সময় ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে তারা সবাই মাটিতে ফ্লোরে বিছানা বিছিয়ে রাত্রিযাপন করে। বর্তমানে পরিবারের বড় মেয়েটিকে তার বড় ভায়ের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাকি ৩জন মায়ের সাথেই থাকছে।
আছিয়া খাতুন বলেন, করোনাকালীন এই সময়ে কেউ কাজে নিতে চায় না। নিজে এবং বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাই এখন কঠিন ব্যাপার। চাউল কোন রকমে যোগাড় করলেও ভাতের সঙ্গে তো তরকারীরও প্রয়োজন হয়। পেয়াজ মরিচ পান্তা ভাত দিয়ে বাচ্চাদের আর কত রাখা যায়। কার কাছে বলবো। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সামনে আসছে ইদ। ওর বাপ বেঁচে থাকার সময় তো প্রতি ইদে বাচ্চাদের জন্য জামা কাপড় কিনে দিত। কিন্তু এই ইদে তো ওর বাবা নেই। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। শুধু চোখে পানি আসছে।
রুপনারায়নকুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, তার জন্য বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। তবে ঘরের ব্যাপারে আগেই কিছু বলতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন বলেন, ঘর বরাদ্ধ আসলে তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে এবং বিধবা ভাতারও ব্যবস্থা করা হবে।