করোনাকালের মাঝেই শুরু হয়ে গেছে অলিম্পিক গেমস। প্রথম সোনার পদক জিতেছেন চীনের শুটার ইয়াং কিয়ান। যিশুকে মান্যতা দিতে ধর্মীয় উৎসব হিসাবে অলিম্পিয়া শুরু হয়েছিল। সারা বিশ্বের কাছে এখন এটি খেলোয়াড়দের উৎসব। সারা বিশ্বের ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা দিন গোনেন এই ক্ষণের অপেক্ষায়। ১৮৯৬ সাল থেকে আধুনিক অলিম্পিকের শুরু। ১৮৯৪ সালে আধুনিক অলিম্পিকের ধারণা দিয়েছিলেন ফ্রান্সের ব্যারন পিয়েরে ডি কউবার্টিন। কোনো শহরকে কেন্দ্র করে অলিম্পিকের পরিকল্পনা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রতিযোগী অলিম্পিকে অংশ নিতে সুনির্দিষ্ট সেই শহরে গিয়ে পৌঁছান। সঙ্গে থাকেন তাদের কোচ, চিকিৎসক, পরিবারের সদস্যরা। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের থাকা-খাওয়া এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে অনেক বড় এলাকার প্রয়োজন হয়। যা একটি গ্রামের চেয়েও বড় হয়ে থাকে। যে কারণে যেখানে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয় সেই সংলগ্ন বিশাল এলাকাকে অলিম্পিক ভিলেজ বলা হয়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জাপানের মাটিতে এই সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ১৯৬৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম টোকিও অলিম্পিক। ২০১১ সালে ফুকুশিমায় ভূমিকম্প ও সুনামির পরে ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি ভাবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি জানিয়ে দিয়েছিল, ২০২০ সালের অলিম্পিক টোকিওতে হবে। তখন থেকেই একটু একটু করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিল টোকিও। এর পেছনে আয়োজকদের যেমন বিপুল খরচ হয়; তেমনি প্রচুর লাভও হয়ে থাকে। এবার বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে ১১ হাজার ৩২৪ ক্রীড়াবিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং ৩৩৯টি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে জাপান। তৈরি হয়েছে সুবিশাল গেমস ভিলেজ। এই আয়োজনে জাপানের আনুমানিক খরচ হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। কিন্তু অলিম্পিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই ভিলেজগুলির কী হয়?টোকিও ভিলেজের কী হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এখনও পর্যন্ত যতবার অলিম্পিক হয়েছে, সেই ভিলেজগুলোর কোনোটি পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে, কোনোটি আবার একেবারেই পরিত্যক্ত। ১৯৯৬ সালের আটলান্টায় অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেন্টেনিয়াল অলিম্পিক পার্কে। পরে পার্কটি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। পার্কে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের স্মৃতি হিসাবে একটি মনুমেন্টও তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে পার্কটি এখন দর্শনীয় স্থান। ক্রীড়াবিদেদের থাকার জন্য পাশে থাকা ক্লার্ক আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছোট ছোট অনেক ঘর বানানো হয়েছিল। সেগুলি পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে পরিণত হয়। ১৯৯২ সালের অলিম্পিকের আগে স্পেনের বার্সেলোনায় কোনো সমুদ্রসৈকত ছিল না। অলিম্পিকের সময় মিশর থেকে বালি এনে সমুদ্রের তীরে থাকা ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে সমুদ্রসৈকত তৈরি করা হয়। সমুদ্রসৈকতটি অলিম্পিক ভিলেজের অন্তর্গত ছিল। অলিম্পিক বার্সেলোনাকে নতুন রূপ দিয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে এটি। প্রতিযোগীদের থাকার ঘরে এখন পর্যটকরা থাকেন। সিডনি অলিম্পিক পার্কে ২০০০ সালের অলিম্পিক আয়োজিত হয়েছিল। এখন সেখানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলা, ব্যবসায়িক সম্মেলন এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। থাকার জায়গাগুলি আবাসনে পরিণত হয়েছে। ১৯৯১ সালে গ্রিসের এথেন্সে মেডিটেরানিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৪ সালের অলিম্পিকেও এর পুনর্ব্যবহার হয়। তারপর থেকে সেটি আবাসনে পরিণত হয়েছে। প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভিলেজগুলিকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায় তার আদর্শ উদাহরণ আটলান্টা, বার্সেলোনা, সিডনি কিংবা এথেন্স। আবার এমনও অনেক উদাহরণ আছে যেখানে ঠিক মতো কাজে লাগানোই হয়নি ভিলেজগুলিকে। বিশাল টাকার সম্পত্তি যেন নষ্ট হওয়ার জন্যই ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছিল। যেমন ইউরোপের বসনিয়ার সারাজেভো অলিম্পিক ভিলেজ। ১৯৮৪ সালে এই বিশাল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ইতিহাস রচনা করেছিল সারাজেভো। প্রথম কোনো কমিউনিস্ট দেশে অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে বার। কিন্তু এরপর থেকে সেটিও পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে আছে। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকের পর আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভিলেজের অনেক অঞ্চল পুনর্ব্যবহার করবেন। তার মধ্যে একটি ছিল সাঁতারের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা অ্যাকোয়াটিক সেন্টার। কিন্তু অলিম্পিক শেষ হওয়ার পর থেকে সেটি বন্ধ হয়েই পড়ে আছে।