‘সরাইলের মিনি কক্সবাজার’। ১৫ বছর আগে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত (২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর) একটি ফিচারের শিরোনাম থেকেই নামটির সূত্রপাত ঘটেছিল। সরাইল-নাসিরনগর সড়কের ধর্মতীর্থ এলাকার আকাশি হাওরের মাঝখানের এ স্থানটি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই স্থানীয় ও ভিন্ন জেলার পর্যটকদের কাছে টানছে। বর্ষায় স্থানটির নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য নামের সাথে মিলের সন্ধান দেয়। দুপুরের পর থেকে সেখানে দ্রƒত বৃদ্ধি পেতে থাকত মানুষের পদচারণা। বাহারি গাড়িতে চড়ে সেখানে আসতেন বড় বড় শিল্পপতি ও সরকারি দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। বিকেলের ধর্মতীর্থে নানা শ্রেণি পেশার নারী পুরূষ ও শিশুদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। মিনি কক্সবাজার খ্যাত স্থানটিতে প্রতি দিনদিন পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়েই চলছিল। মহান জাতীয় সংসদে স্থানটিকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে সকল সুবিধা ও নিরাপত্তার কার্যক্রম নিশ্চিতকরণের দাবী জানিয়েছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। বছরের দুই ঈদে সেখানে পর্যটকের ¯্রােত নামে। ঈদের পর ৩-৪ দিন এ ধারা অব্যাহত থাকত। সড়কের দু’পাশে থাকত ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পীডবোট। আকাশি হাওরের পানিতে মনের আনন্দে ভ্রমণ করত পর্যটকরা। কেউ কেউ ভেসে যেত বিকেলের শীতল হাওয়ায়। সড়কের পাশের সিমেন্টের তৈরী ব্লকে বসে ভালবাসার গল্পে হারিয়ে যেতেন প্রেমিকযুগল। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে মহামারি করোনার কারণে ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত স্থানটির সকল কিছু হারিয়ে গেছে। সরকারের কঠোর বিধি নিষেধের কারণে থমকে আছে মিনি কক্সবাজার। লকডাউন চলাকালে বিনা প্রয়োজনে লোকজনের ঘর থেকে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। পর্যটক ঠেকাতে দু’দিকে পাহাড়ায় রয়েছেন পুলিশ। পর্যটক শুন্য সেই মিনি কক্সবাজারে চলছে এখন সুনসান নিরবতা। সড়কের পাশে হাওরের পানিতে নেই কোন নৌকা। মাইকের শব্দ নেই। নেই কোন নাচ গান। হারিয়ে গেছে ফেরিওয়ালাদের আকুতির শব্দ। নদীতে স্বচ্ছ পানির ঢেউ ও কলকল শব্দ আছে। সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে লালচে সূর্যের অস্তমিত হওয়ার মনোরম সেই দৃশ্য ঠিকই আছে। শুধু নেই পর্যটকরা। এত কিছুর পরও ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরূ করে গতকাল রোববার পর্যন্ত দূরদূরান্তের কিছু পর্যটক অটোরিকশায় করে এসেছেন। পায়ে হেঁটে মূল স্পটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যেতে পারেননি। কারণ বিধি নিষেধের কারণে বাধা দিচ্ছেন পুলিশ। মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাষুরা। আবার অনেকেই চুপিসারে দূরবর্তী স্থানে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে একটু খোশ গল্প করার চেষ্টা করছেন। স্বল্প সময়ের জন্য একটু হাঁটাহাঁটি করে হিমেল হাওয়া উপভোগ করছেন। এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, মহামারি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার দিচ্ছেন কঠোর লকডাউন। কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে সভা সমাবেশ বিনোদন কেন্দ্র ও জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়াও নিষেধ। তাই আমরা ঈদ-উল-আযহার দিন থেকেই ‘সরাইলের মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত স্থানটিতে পর্যটকদের যেতে দিচ্ছি না। সেখানে যেকোন ধরণের জমায়েত প্রতিরোধে কাজ করছি।