খুলনা মহানগরীসহ উপজেলা সমুহের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। কোনোভাবেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের উর্দ্ধমুখী চাপ কমানো সম্ভব হচ্ছেনা। আর এ অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আশার বাণী শোনাচ্ছে এঅঞ্চলের নানা সামাজিক সংগঠন। তাঁরা জানিয়েছেন অক্সিজেন সংকট হবেনা।তবে অনেক হাসপাতালে রুগীর চাপ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। যার কারণে হাসপাতাল গুলোতে নানা সংকট ও সমস্যার কথা ইতোমধ্যে জানা গেছে।
এদিকে খুলনার গ্রামে গ্রামে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে জোরালো কারণ দেখিয়েছেন
বিশেষজ্ঞরা। এ অঞ্চলে ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন চলছে। খুলনা মহানগরীসহ উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি ও লকডাউনের বিধিনিষেধ শতভাগ এ ক্লান্তিলগ্নেও মানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। হাটে-বজারে, খেলার মাঠে, নদী তীরে ও ঘাটে, রাস্তার মোড়ে, ওলি-গলিতে কোথাও মানছেনা বিধিনিষেধ। খুলনা মহানগরীসহ উপজেলাগুলোতে সকাল-বিকাল মাঠে-ঘাটে, হাটে বাজারে মানুষের ভীড়। মানছেনা অনেকে স্বাস্থ্যবিধি। বন্ধ হয়নি নদীর ঘাট ও ইজিবাইক,মাহেন্দ্র, সিএনজি এবং ভ্যান রিক্সার চলাচল। স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের নজর এড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কাজে রাস্তার মোড়ে, ঘাটে-ঘাটে নিয়োজিত করা হয়েছে বাঁশি ও মোবাইল টিম। পাশাপাশি আতাই নদী ও ভৈরব নদীর ঘাট গুলোতে পুলিশ, আনসার সদস্য ও সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উপজেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ বিধি মেনে পারাপার নিশ্চিত করার জন্য। এদিকে খুলনা শহর ও আশপাশের ঘাটগুলোতে মেট্রো পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পারাপার অব্যহত আছে। উপজেলাগুলো সহ খুলনা শহরে করোনার প্রকোপ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সচেতনমহল ও প্রতিরোধ কাজে নিয়োজিত সকল মহল উদ্বিগ্ন।
দ্বিতীয়তঃ এ এলাকার অনেক লোকজনের বিভিন্ন কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবাধ যাতায়াত। আর এ অবাধ যাতায়াত খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের লোকজনের বেশি। আর এ দুটি বিভাগের লোকজন স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসায়িক কারণে অবৈধ পথে ভারতে যাতায়াত কম নয়। প্রতিনিয়ত লোকজন অবৈধ পথে ভারতে আসা-যাওয়া অব্যহত আছে, এমনই অভিমত ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে সারা দেশের ন্যায় খুলনায় শুরু হয়েছে টিসিবির মালামাল বিভিন্ন স্পটে গাড়িতে বিক্রি করা। এখানে চলছে সকল বিধি ভঙ্গের প্রতিযোগিতা। হাটে-বাজারে,মোড়ে-মোড়ে,নদীর ঘাটে ও তীরে, খেলার মাঠে সর্বত্রই লোক সমাগম চলছে। স্বাস্থ্যবিধি যেখানে উপেক্ষিত।
গতকালের রিপোর্টেও এ অঞ্চলে মৃত্যুর মিছিল ও সংক্রমণের সংখ্যায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে উর্দ্ধগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২জন ও ঢাকা বিভাগে ৭০ জন মারা গেছে।করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় মারা গেছে সর্বোচ্চ ১৮২ জন এবং করোনা শনাক্ত হয়েছে দেড় সহ¯্রাধিক। সারা দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ২৩৭ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০,০১৬ জন। নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৬২৩০ জন। মোট শনাক্ত হয়েছে ১২,১০,৯৮২ জন। নমুনা পরীক্ষার দিক দিয়ে শনাক্তের হার ৩০.১২ ভাগ। খুলনাঞ্চলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে হলে এ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য বিধিসহ কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ শতভাগ মানা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই, এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয়তঃ এ দেশের এ কঠিন ক্লান্তিলগ্নে যে করণেই হোক অবৈধভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এদেশের ভারতমুখী চোরা কারবারী কঠিন ভাবে রোধ কল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য যে, বিগত দিনের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বুলেটিন ঘোষনা করার পর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অন্য দিন অপেক্ষা তৎপর হয়েছে এমন কথা বলছে এলাকাবাসী। তবে শহর ও গ্রামের ভেতরে ভেতরে মোড়ে মোড়ে সকাল- বিকালে লোকজনের ভীড় জমানো ও খেলার মাঠে খেলোয়াড় ও দর্শকদের সকল বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে জনসমাবেশ ঘটানো বন্ধ হচ্ছেনা বলেও অনেকে বলাবলি করছেন। খুলনার পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত খুলনার কর্মহীন মানুষের খাবার ও প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে শুধুই লকডাউনের বিধিনিষেধ মানাতে চাইলে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব তা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বাহিনী রিপোর্ট করতে পারবে। পাশাপাশি টিকা প্রদান যত দ্রুত করা যাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ তত সহজ হতে পারে বলেও পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন।