ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকায় জলিল মোল্লার ডাঙ্গী গ্রামে এর একটি জলাধারে বিরল প্রজাতির মিঠা পানি যে কুমিরটি আস্তানা গেড়েছে সেটি উদ্ধারের জন্য শুক্রবার দ্বিতীয় দফা অভিযান চালনো হয়।
বেলা পৌনে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেও ধরা সম্ভব হয়নি কুমিরটিকে। তিন দফা জালের আটকা পরলেও প্রতিবারই জাল ছিড়ে বের হয়ে যায় কুমিরটি।
অবশেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ উদ্ধার অভিযানের প্রধান বন্য প্রাণী সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার অভিযান সফল না হওয়ায় আপাতত উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পনি কমলে এ উদ্ধার অভিযান আবার চালানো হবে। তিনি বলেন, তবে বর্ষার পানিতে ওই ক্যানেল তলিয়ে গেলে কুমিরটি স্বেচ্ছায় নদীতে বের হয়ে গেল আর উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযান ব্যার্থ হওয়ার পর এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভা করা হয়। গ্রামবাসীকে কুমিরটিকে বিরক্ত করতে না বলা হয়েছে। কেননা কুমিরটিকে কেউ বিরক্ত না করলে কুমির কারো অনিষ্ট করবে না।
তবে ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে দুই দফা ব্যর্থ অভিযানের পর তারা ভয়ে ও আতংকে মুশড়ে পড়েছেন। কখন কি ঘটে যায় এ নিয়ে তারা আততংকিত হয়ে পড়েছেন।
গতকাল এ উদ্ধার অভিযানে প্রাণী সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের ১২ জনের একটি দলের সাথে স্থানীয় ১০ জেলে অংশ নেয়।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ওয়াফিজ মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বিশ্বাস (৬২) বলেন, তিনি এক হাজার ৪০০ হাত লম্বা ও ৩২ হাত চওড়া একটি জাল এবং অপর জেলে মীর মালতের ডাঙ্গী গ্রামের চানু মোল্লা (৫৪) চার হাজার হাত লম্বা ও ২০ হাত চওড়া এই দুটি জাল দিয়ে বেল কয়েকবার কুমিরটি ধরার চেষ্টা করেন। বিকেল তিনটা, সাড়ে তিনটা ও পাঁচটার দিকে তিন দফা কুমিরটি জালে আটকা পড়ে, কিন্তু প্রতিবারই জাল ছিড়ে বের হয়ে গেছে কুমির। তিনি বলেন, যতটা ধারণা করা হয়েছেল (১০ ফুট) কুমিরটি তার চাইতেও বড় বলে মনে হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার কুমিরটি উদ্ধারের জন্য প্রথম চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পাঁচ ঘন্টা চেষ্টা করেও কুমিরটি ধরা সম্ভব হয়নি।
যে জলাদারে কুমিরটি আস্তানা গেড়েছে সেটি এলাকাবাসীর কাছে ফালুর খাল হিসেবে পরিচিত। এ জলাধারের দৈর্ঘ্য আনুমানিক এক হাজার মিটার ও প্রস্ত ৭৫ থেকে ১০০ মিটার। এলাকা ভেদে এ জলাধারের গভীরতা ৫ মিটার থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত।
একটি কুমিরের ভয়ে আতংকিত সময় কাটাচ্ছে ফরিদপুরের একটি চর এলাকার জনগোষ্ঠি। গত শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে ওই কুমিরটি চর এলাকার একটি জলাধারে দেখেন এলাকাবাসী। এরপর ওই এলাকায় মাইকিং করে সর্ব সাধারণকে ওই জলাশয়ে না নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, কুমিরটির ধরার জন্য গত বুধ ও শুক্রবার দুটি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এলাকাবসীর মনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কুমিরটি ধরে এরাকাবাসীর ভয় দূর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সফল হতে পারিনি। তবে কুমিরটিকে যাতে এলাকাবাসী ক্ষতি না করে, সে বিষয়ে স্থানীয় জনগরের সাথে কথা বলেছি। একই সাথে কুমুরের আক্রমনে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে বিষয়ে জনগনকে সচেতন করতে এলাকা জুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। আপাততো ঐ জলাশয় ব্যবহার না করার জন্য স্থানীয় জনগনকে অনুরোধ করা হয়েছে।