২আগষ্ট জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়) ১৬০তম জন্মবার্ষিকী। করোনা বিধিনিষেধে বিজ্ঞানীর জন্মবার্ষিকী পালনে থাকছে না কোনো আয়োজন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বিজ্ঞানীর জন্মভিটা বাড়ীতে তার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করবেন। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়-লী গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্যার পিসি রায়ের পিতা জমিদার হরিশ্চন্দ্র রায় এবং মাতা ভূবন মোহিনী দেবী। আচার্য পিসি রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পাঁচ বছর বয়স থেকে। ১৮৬৬ থেকে ১৮৭০ সাল এ চার বছর কাটে নিজ গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে। ১৮৭১ সালে ভর্তি হন কলকাতার হেয়ার স্কুলে। তারপর ১৮৭৪ সালে অ্যালবার্ট স্কুলে। সেখান থেকেই ১৮৭৮ সালে এন্ট্রান্স, ১৮৮১ সালে এফএ পাস করেন তিনি। ১৮৮২ সালে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হয়ে অনার্সসহ স্নাতক শ্রেণীতে গণিতে অসাধারণ মেধার বলে তিনি গিলক্রাইষ্ট বৃত্তি নিয়ে চলে যান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই বিএসসি ডিগ্রী নেন। রসায়নশাস্ত্রে গবেষণারত প্রফুল্ল চন্দ্র রায় মারকিউরাস নাইট্রাইট’র মত রসায়নশাস্ত্রে মৌলিক পদার্থ উদ্ভাবন করে সারা বিশ্বকে চমকে দেন। এরপর বিভিন্ন সময় সম্মানসূচক ডিগ্রী ১৮৮৬ সালে পিএইচডি, ১৮৮৭ সালে ডিএসসি, ১৯১১ সালে সিআইই, ১৯১২ সালে আবার ডিএসসি এবং ১৯১৮ সালে ফাদার অব নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। আচার্য প্রফুল্ল¬ চন্দ্র রায় ১৮৯২ সালে মাত্র ৮০০ টাকা মুলধন নিয়ে বেঙ্গল ক্যামিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটির নাম কারণ করা হয় দি বেঙ্গল কেমিক্যাল এ- ফার্মাসিটিক্যাল। ১৯৩৭ সালে মানিকতলায় স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রিসোর্ট ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। বহুগুণে গুণান্নিত পিসি রায় ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, শিক্ষক, শিল্পী ও সমবায়ের রূপকার। সমাজ সংস্কারে মানবতাবোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। তদানীন্তন সময়ে পল্লী গ্রামের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন। সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৮ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় পিতার নামে আরকেবিকে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য, ১৮৫০ সালে রাড়-লীতে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপ-মহাদেশে নারী শিক্ষার উন্নয়নকল্পে স্ত্রী ভূবন মোহিনীর নামে বাংলাদেশে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেন। ১৯৩১ সালে খুলনার নিউ মার্কেটের পশ্চিম পার্শ্বে ২০৫.৯৯ একর জমিতে এপিসি কটন মিল স্থাপন করেন। মিলটির নাম বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী নামকরণ করা হয়েছে। বাগেরহাটে পিসি কলেজ স্থাপন করেন। দেশ-বিদেশে তার প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আজও অবিরাম মানব সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর পদচারণা ও নিজ হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আজও অবহেলিত রয়েছে। পিসি রায়ের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার ভবনগুলো যথাযথ রণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। এখনই সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নিলে একসময় তা কালের বিবর্তে হারিয়ে যাবে। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন ৮২ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটে বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের। ফাদার অব নাইট্রাইট খ্যাত বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞনী আজীবনের নির্মোহ কর্মসাধক, বিদ্যাব্রতী, জনদরদী ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন মৃত্যু বরণ করেন। স্যার পিসি রায়’র জন্মভূমিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং জাতীয়ভাবে তার জন্মবার্ষিকী পালন করা হোক এলাকাবাসী এটাই প্রত্যাশা করেন।