রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেছেন, হাসপাতালের বাইরে গিয়ে পরীক্ষা করতে রোগীদের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। সেটি আর করতে হবে না। এ জন্য হাসপাতালে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার জন্য আউটডোর, ইনডোর, ওয়ান স্টপ সার্ভিস এবং কার্ডিয়াক প্যাথলজি নামে চারটি পৃথক প্যাথলজি সেবা চালু করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য করোনা রোগীদেরকে আর হাসপাতালের বাইরে যেতে হবে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংকালে সোমবার (২ আগস্ট) তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত সকল রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই হাসপাতালেই পৃথক চারটি প্যাথলজি সেবা রোববার (১ আগস্ট) থেকে চালু করা হয়েছে। এখন করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য সিটি স্ক্যান ও রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালেই হচ্ছে। এতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা খরচও কয়েকগুন কমে আসবে।
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতায় এসব পরীক্ষা আগে হাসপাতালটির বাইরে থেকে করতে হতো। এতে একজন রোগীর পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ব্যয় হতো। আর ফলাফল পেতে সময় লাগতো দীর্ঘক্ষণ। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তেন।
এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, সিআরপি ডিডাইমার, সিরাপ ভ্যারিয়েন্ট, সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন রক্তের পরীক্ষা নিরীক্ষা এখন থেকে এই হাসপাতালে ১৪০০ টাকার মধ্যেই করা যাবে। এতে টাকা যেমন বাঁচবে তেমনি দ্রুত ফলাফলও পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত ৬০০ টাকায় ডি-ডাইমার, ২৫০ টাকায় সিরাম ফেরিটিন এবং ১৫০ টাকায় ডি-হাইড্রোজেনেস ও সিআরপি পরীক্ষা করা যাবে। পাশাপাশি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের আরও তিনটি পরীক্ষা একসঙ্গে ৬০০ টাকায় করা হবে। আর ইসিজির ব্যবস্থা তো আগে থেকেই এখানে ছিল। এর সঙ্গে এখন ট্রপোনিন আইও টেস্ট করা যাবে ৫০০ টাকায়। হাসপাতালের বাইরে এই পরীক্ষাগুলো করাতে করোনা রোগীদের আগে গুনতে হতো পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর করোনা রোগীদের এই পরীক্ষাগুলো একাধিকবার করতে হয়। ফলে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে এর আগে অনেক রোগী পরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা থেকে এখন রেহাই পেল রোগীরা।
রাজশাহীতে করোনার পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে এবং শনাক্তের হার ও ভর্তি সংখ্যাও কমেছে উল্লেখ করে জানান, রাজশাহী থেকে এখন পাবনা ও সিরাজগঞ্জে সনাক্ত ও মৃত্যু হার বেড়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীতে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় এখন ঢাকাতে করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এখনো হাসপাতালে ভর্তিরত ৭০ শতাংশ করোনা রোগীই গ্রামের তাই উপজেলা ভিত্তিক স্বাস্থ্যবিধিতে আরো কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, প্রথম অবস্থায় হাসপাতালে অক্সিজেন যুক্ত করোনার বেড ছিলো ৬৫ টি। প্রথম অবস্থায় অক্সিজেনের চাহিদা কম ছিলো পরে বাড়তে থাকে। আমরা সে সময় দেখলাম সিডিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে সম্ভব হবে না। এ কারণে অক্সিজেনের লাইন লাগানো শুরু করলাম। গত ঈদুল ফিতরের সময় থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত একটি টিম কাজ করেছে। প্রথমে অক্সিজেনের যে পাইপ দেওয়া হয়েছিলো তাতে অনেক জায়গায় হাইফ্লো দিলে স্লো হয়ে যাওয়ার বিষয়টি খেয়াল করি। যে কারণে পরবর্তিতে আবারও মোটা লাইন দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করেছি। এর পরে বেডের সাথে সাথে বাড়ানো হয়েছে অক্সিজেনেরও লাইন। এরপর থেকে আর কোন করোনা রোগী এখান থেকে ফিরে যায়নি। আগে অক্সিজেন লাগতো দুই থেকে তিন হাজার এখন লাগছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের দেহে করোনা পজিটিভ ছিল আর অন্যরা রোগটির উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
এ তথ্য রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উল্লেখ করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, এক দিনে মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজশাহীর ছয়জন, নাটোরের একজন, নওগাঁর দুইজন, পাবনার পাঁচজন ও কুষ্টিয়ার একজন। এদের মধ্যে নয়জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৭ জন। একই সময় সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৯ জন। একই সময়ে করোনা ইউনিটের ৫১৩ বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৯৯ জন। এদের মধ্যে আইসিইউতে রয়েছে ২০ জন।
হাসপাতাল পরিচালক জানান, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ওঠানামা করছে। রোববার দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৩৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার ছিল ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়াও গত শুক্রবার ছিল ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ২২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বুধবার ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ আর গত মঙ্গলবার শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।