খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জনপদ কয়রায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা সদর, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশির বিস্তীর্ণ এলাকার বিল ও মাঠ ঘাট বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে করে কৃষকের স্বপ্ন চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বীজ ধানও মিলছেনা। ধান রোপন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহীন রয়েছে কৃষকরা। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে তাদেরকে হতাষ না হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশিরভাগ জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইজ গেটগুলো অকেজো থাকায় ঠিকমতো পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। অর্ধ শতাধিক জলমহলের ইজারাগ্রহিতারা যত্রতত্র নেট পাটা দিয়ে মাছ ধরার কারণে বিল খালের পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিল ও খালের খাসজমিতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে এবং চলাচলের জন্য ছোট ছোট রাস্তা নির্মাণ করায় পানি আটকে জলাবদ্ধতার চরম সৃষ্টি হয়েছে। এখনও কয়রার অধিকাংশ জায়গায় বুষ্টির পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কয়রা সদরের ২নং কয়রা, ৩নং কয়রা, ৬নং কয়রা, মহারাজপুরের দশালিয়া, মদিনাবাদ, অন্তাবুনিয়া, মঠবাড়ি, শ্রীরামপুর, লালুয়া বাগালী, উত্তর বেদকাশির বতুলবাজার, বড়বাড়ি, গাববুনি, শাকবাড়িয়া, আমাদির তালবাড়িয়া, শুড়িখালি, চান্নিরচক, দক্ষিণ বেদকাশির মাটিয়াভাঙা, গোলখালি, পাতাখালি, আমাদী, নাকশা, জায়গীরমহল,গীলাবাড়ি,সাতহালিয়া সহ এলাকার বিলের পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে এলাকার হাজার হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগের পড়েছে। শত শত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে চাষীরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে। ৬নং কয়রা গ্রামের ঘের মালিক সাইফুল ইসলাম গাজী জানায়, কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে এখানকার সবগুলো মৎস্য ঘের তলিয়ে একাকার হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়রার মৎস্য ঘেরের ক্ষতির বিষয়টি উপরি মহলকে জানানো হয়েছে।
কয়রা সদরের ৫নং কয়রার কৃষক মোল্যা মনিরুজ্জামান মনি বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কয়রার অধিকাংশ বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। বীজতলা পানি হতে জেগে না উঠলে তা মারা যাবে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ধানের বীজ পাওয়া খুব দুরহ ব্যাপার হয়েে দাড়িয়েছে। সরকারের মাধ্যমে কৃষকদের সহযোগিতার প্রয়েজন বলে তিনি জানান। কয়রায় কবে নাগাদ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি মিলবে তা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের। উপজেলা সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর কয়রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। গত কয়েকদিনের বর্ষনে বীজতলা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শাক সবজি ডুবে কৃষকেে ব্যাপক ক্ষিিত হয়েছে। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির ধানের বীজ যাতে সংকট না পড়ে তার জন্য ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকেদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, কয়রা সহ উপকুলীয় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি বড় প্রকল্প শীঘ্রই একনেকে উঠবে। এটি অনুমোদন পেলে নুতন নতুন সুøইজগেট নির্মাণ ও পুরনো স্লইসগেট সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।