ত্রানের স্লিপ চাওয়ায় চেয়ারম্যানের স্ত্রীর গলাধাক্কা গুরুতর জখম হওয়া শতবর্ষি সেই বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার লালমনিরহাটের আদিতমারী হাসপাতালের ছাড়পত্র গায়েব করা অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার(৩ আগস্ট) বিকেলে ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান।
এর আগে সোমবার(১৯ জুলাই) ত্রাণের স্লিপ নিতে উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলীর বাড়ি গেলে তার স্ত্রী ও মেয়ের দেয়া গলা ধাক্কায় শতবর্ষি বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া মারাত্মক জখম হন।
আহত শতবর্ষি বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের মৃত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী ও রিক্সা চালক নুরুজ্জামানের মা।
জানা যায়, অতি দরিদ্র আলেমা বেওয়া রিক্সাচালক ছেলে নুরুজ্জামানের সংসারে বসবাস করেন। সম্প্রতি করোনার লকডাউনের কারনে রিকশাচালক ছেলের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়েন পরিবারটি। ঈদের দুইদিন আগে পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি গ্রহণ করেন।
সেই ত্রাণ নিতে সোমবার(১৯ জুলাই) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন চেয়ারম্যান। সকালে পান্তা ভাত খেয়ে ইউনিয়ন পরিষদেও চলে যান। তখন চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাখা বৃদ্ধার ত্রানের স্লিপ নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধা আলেমা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে আসলে স্লিপ দাবি করেন বৃদ্ধা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) ও মেয়ে সুহিন আক্তার (১৯) বৃদ্ধা আলেমাকে গলা ধাক্কা দিলে ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে যান। এসময় তার দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত, পা ও বুকে প্রচ- আঘাত পেয়ে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
বিপদ দেখে দ্রুত পল্লী চিকিৎসক নিয়ে নিজ বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন চেয়ারম্যান। মায়ের অসুস্থতার খবরে রিকশাচালক ছেলে নুরুজ্জামান স্থানীয়দের সহায়তায় বৃদ্ধা আলেমাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। করোনা সংক্রমনের ভয়ে এবং আসন্ন ঈদের কারনে ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেন বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া।
এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে আহত বৃদ্ধার পাশে এসে দাঁড়ান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। বৃদ্ধাকে অর্থসহায়তা প্রদানসহ ন্যায় বিচার পাইয়ের দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এ ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৯ জুলাই রাতে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশ নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে ২৮ জুলাই স্ত্রীসহ চেয়ারম্যান শওকত আলীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই আদালতের জামিনে মুক্তি পান তারা।
বৃদ্ধা আলেমা বেওয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত সনদ ও ছাড়পত্র মুলে বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। তাই সেই চিকিৎসা সনদ দুর্বল করতে ক্ষমতার প্রভাবে কৌশলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী হাসপাতালের কর্তব্যরতদের ম্যানেজ করে বৃদ্ধার আলেমার ছাড়পত্র গায়েব করেন এবং হাসপাতালে ভর্তি বহিতে রোগীকে পলাতক দেখানো হয়েছে বলে বাদির অভিযোগ। যথারীতি চিকিৎসকদের বলে স্বাক্ষর করে রোগীকে নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে নেয়ার পরও পলাতক দেখানোর বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে পুনরায় অভিযুক্ত করে বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান মঙ্গলবার ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ বলেন, দায়িত্বরকে জানায়ে গেলে পলাতক দেখানো হয় না। রোগী স্বাক্ষর করেও কেন পলাতক দেখানো হলো বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।