খুলনা বিভাগ জুলাই মাসে করোনার ভয়াবহ রূপ দেখেছে। খুলনার ১০ জেলায় এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। যে কারণে খুলনা বিভাগ করোনার হটস্পট হিসেবে সবার নিকট পরিচিতি লাভ করে। গত ১৬ মাসে খুলনা বিভাগে করোনায় ২ হাজার ৪২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় শুধু জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ জনের। যা জুন মাসে ছিল ৪২৫ জন। খুলনা জেলা মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে সবার উপরে ছিল। যেখানে প্রাণ হারান ৬২৪ জন। কুষ্টিয়ায় ৫৫৩ ও যশোরে ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়। সবচেয়ে কম ৬৭ জনের মৃত্যু হয় মাগুরা জেলায়। গত মাসে দেশের মধ্যে সর্বাধিক ৩৬ হাজারের বেশি ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় খুলনা বিভাগে। জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারে খুলনার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ ছিল খুবই বেশী। হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।হাসপাতালগুলোতে প্রতিমুহুর্তে ছিল মৃত্যুর মিছিল আর আহাজারি। গোটা। করোনায় মুমূর্ষু অবস্থায় ঢুকেছেন হাসপাতালে, বের হয়েছেন নিথর দেহে। ফাঁকা ছিল না কোনো শয্যা। পাশাপাশি ছিলো প্রবল অক্সিজেন সংকট আর চিকিৎসকের অপর্যাপ্ততা। প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে প্রতি মুহূর্তে মানুষের ছোটাছুটি আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাড়িয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়া এই সংক্রমণ ও মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছিল পুরো দেশকে। তবে মাসের শেষ দিকে এসে বিভাগে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু কিছুটা কম হলেও চলতি মাসে সংখ্যা ওঠা নামা করছে।জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের একেবারই কম। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আবারও আগের রূপ ধারণ করতে পারে।যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনম সেন্টারের অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, গ্রামের লোকেরা হাসপাতালে আসতে দেরি করে যে কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এটা হচ্ছে। আর একটা কারণ হলো শহরের তুলনায় গ্রামের কম সংখ্যক মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে যে কারণে এই ভয়াবহ অবস্থা।একই মাসে করোনায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৩৮৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, খুলনা বিভাগে গত ৩০ ও ৩১ জুলাই করোনায় মারা গেছে যথাক্রমে ৩৪ ও ১৯ জন। যা গত ৩৫ দিনের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে কম।খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, লকডাউনের কারণে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন এলেও খুলনা বিভাগে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা ওঠানামা করছে।মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে একটু প্রবণতা তৈরি হলেও চলতি মাসে ঢিলেঢালা। এর কারণ হিসেবে মানুষের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাকেই দেখিয়েছে বিশেষজ্ঞমহল। এছাড়া, টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার কারণেও পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মাত্র দুই-তিন দিন শনাক্ত ও মৃত্যু কিছুটা কমলেই, গোটা পরিস্থিতি অনুধাবন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আগের রূপ ধারণ করতে পারে।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত কিছুটা কমেছিল। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা থেকে সরে এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।গত বছরের ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় খুলনা বিভাগের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল বলে এক সূত্রে জানা গেছে।