খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামে ব্যবসায়ী যুবককে কুপিয়ে হত্যা মামলায় ১০ দিনেও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।গত ২৫ জুলাই রাতে দুষ্কৃতিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ২৭ জুলাই নিহতের মা হাফিজা খাতুন বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সেনহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমানকে এক নম্বর আসামীসহ মোট ১৫ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও ৬/৭জনকে আসামি করা হয়েছে। দিঘলিয়া থানার মামলা নম্বর ৯, তারিখ ২৭/০৭/২০২১ইং ধারা ৩০২/৩৪।
এদিকে পুলিশ গত ২৬ জুলাই দুপুরে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ সানী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশের উপস্থিতি দেখে সে দৌড়িয়ে পালানো কালে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই হত্যাকা-ের সাথে সানীর সম্পৃক্ততা জানতে পেরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এদিকে পুলিশের দাবি, ইয়াছিন শেখ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। নিহত ইয়াসিন শেখের আপন মামা শাহজাহান গাজীর ওপর পূর্বের হামলার প্রতিশোধ নিতেই খুন করা হয় দিঘলিয়ার ব্যবসায়ী ইয়াসিন শেখ কে। হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ২৮ জুলাই বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে এ মামলার আসামি সানি (১৯)। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামানের আদালতে সে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত সানি (১৯) একই এলাকার বাবুল খাঁর পুত্র। অপরদিকে নিহত ইয়াসিনের মা হাফিজা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ২৮ জুলাই দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি দিঘলিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি তাঁর পুত্রের প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসীর দাবী জানান।
দিঘলিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন কুমার সরকার বলেন ,গত ২৭ জুলাই সানিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে চাইলে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। সানি হত্যাকান্ডের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এবং আসামীদের গ্রেফতারের স্বার্থে সব এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছেনা। তবে হত্যাকান্ডে জড়িত অনেকের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে সানি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এই হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন এস আই সঞ্জীব সাহা।
মামলার বাদী হাফিজা বেগমের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন কুমার সরকার বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ ক ‘ সার্কেল রাজু আহমেদ স্যারের উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার সাথে মামলা গ্রহন করা হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে একজন আসামি সানী (১৯) কে আটক করা হয়েছে। মামলার বাদী অন্য কারোর প্ররোচনায় মনগড়া কথা বলছেন। এই মামলায় বাকি আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ইয়াসিন হত্যার এক প্রতিবাদ সমাবেশ চন্দনীমহল সাংগঠনিক শাখা আ'লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ইয়াসিনের মামার সাথে বিরোধ ও তার উপর হামলা ও তাঁকে মৃত্যুমুখের যাত্রী করে দেওয়ার ঘটনার জেরে খুন হয় ইয়াসিন। ২৫ জুলাই ইশার নামাজের পর দুর্বৃত্তরা ভিকটিমকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন যখম করে। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে চন্দনীমহল গাজী পাড়ায় ফেলে যায়। পরে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে নিহতের স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঐদিন রাতেই পুলিশ সানিকে আটক করে।