বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ফসলের মাঠ। মাঠের দিক তাকিয়ে এখন শুধুই হাহাকার করছেন শরণখোলার ১০ সহ¯্রাধিক চাষি। আমনের মাঠে পচে যাওয়া বীজের দৃশ্য দেখে দিশেহারা হয়ে পরেছেন তারা।
চাষের সময় থাকলেও বীজের অভাবে নতুন করে বীজতলা তৈরী করতে পারছেন না চাষীরা। বর্তমানে শরণখোলার চার জন ডিলারের কারো কাছেই বীজ ধান মজুদ নেই। কারণ এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা বিএডিসি থেকে যে বীজ ধান উত্তোলন করেছিলেন তা বিক্রি হয়ে গেছে ৩০ জুনের মধ্যেই। কিন্তু ২৭ জুলাই থেকে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট এবং বর্তমানে বীজ ধান না পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক (ডিডি) জি এম এ গফুর বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) শরণখোলা পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে অন্য এলাকা থেকে বীজধান সংগ্রহ করে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন চাষিদের।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শরণখোলায় মোট ১১হাজার ২৯০জন চাষির মাধ্যমে এবার ৯ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআর- ১১, বিআর-৫২ ও বিআর- ২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরী করা হয়। সম্প্রতি অতিবর্ষণের জলাবদ্ধতায় ৫০ভাগ বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়েছে।
অথচ, কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৮০ভাগ বীজতলাই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামের চাষি মো. সাইয়েদ আলী জানান, তার ১০ কাঠা জমির বীজতলা সব নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরীর জন্য ডিলারের কাছে গিয়ে কোনো বীজধান পাচ্ছেন না। সাউথখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের চাষি মো. জহির খলিফা জানান, তার চার বিঘা জমির আমনের বীজতলা সবই পচে গেছে। এখন কি করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তবে বেশী দাম দিলে সাব-ডিলারের কাছে বীজ মিলছে বলে অনেক চাষী জানান।
মালিয়া রাজাপুর গ্রামের চাষী মোঃ আতিকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রায়েন্দা বাজারের সাব ডিলার আয়শা এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির হোসেন তার কাছ থেকে ১০ কেজি ৭১ জাতের বীজ ৮০০ টাকা রেখেছেন। অথচ ওই বীজের সরকারি মূল্য ৪২০ টাকা। পশ্চিম খোন্তাকাটার গৌরঙ্গ মিত্রী জানান, একই বাজারের মিজানুর রহমান গাজীর দোকান থেকে ৫২ জাতের বীজের দাম রেখেছে ৯৫০ টাকা। অথচ সরকারি মূল্য ৬৬০ টাকা।
এব্যপারে জানতে চাইলে আয়শা এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির হোসেন বলেন, যেহেতু কোথাও বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কৃষকের স্বার্থে রংপুর থেকে বীজ আনতে খরচ বেশী পড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বেশী দামে বিক্রী করতে হচ্ছে।
শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের ডিলার মেসার্স শহিদুল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিএডিসি অনুমোদিত চার জন ডিলার এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বিআর-৫২, বিআর-২২ ও বিআর-১১ এই তিন জাতের ৪৫ টন বীজ ধান উত্তোলন করেন। এসব বীজ ধান ৩০জুনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের কারো কাছেই এখন বীজধান নেই। তাই সরকারিভাবে এই সংকট সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, কৃষি অধিদপ্তর খুলানার উপপরিচালক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, এই মুহূর্তে স্থানীয়ভাবে বীজ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব না। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত বীজ ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা করে সরকারিভাবে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। দ্রুত এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।