সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭টি ওয়ার্ডেরর মানুষ জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, লাবসা, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা। জলাবদ্ধতার কবলে থাকা সাতক্ষীরা পৌরসভার ১,২,৩, ৬,৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড।
জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা, বাড়িঘর, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, কবরস্থান তলিয়ে রয়েছে। রান্নাঘর ও বসত ঘরে পানি উঠে গেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর বিল, ডাইয়ের বিল, কচুয়ার বিল, ঘুড্ডির বিল, শাল্যের বিলসহ অর্ধডজন বিল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে আউশ ও আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন অনেকই।
ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু জানান,
সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা, জেয়ালা, দামারপোতা, কাজিরবাসা, তালতলা, গোবিন্দপুর, বড়দল, বালুইগাছা, ধুলিহরসহ বিভিন্ন গ্রাম এখন পানিতে ভাসছে। এসব এলাকার রাস্তা, বাড়িঘর ও কবরস্থান জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোন পথ না থাকায় দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। অনেকের রান্নাঘরে পানি উঠে গেছে।
একই কথা বলেন, ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের দুদিনের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চেলারবিল, ঢেপুরবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিলসহ ১০টি বিল। মরিচ্চাপ নদী ও বেতনা নদী ভরাট হওয়ার কারণে নদীগুলো বিল ছাড়া উঁচু হয়ে গেছে। ফলে খাল ও বিলগুলো ডুবে গেছে। পানি নিষ্কাশনের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও স্লুইস গেট।
একই অভিযোগ করে লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলিম বলেন, মানুষের ঘরবাড়ি ভরে গেছে পানিতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। পচাঁ দুর্গন্ধময় দূষিত পানিতে ছড়াচ্ছে চর্মরোগ। পরিবেশ দূষণের কারণে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এসময় জলাবদ্ধতার জন্য মৎস্য ঘের মালিকদের দায়ী করে স্থানীয়রা বলেন, পানি
নিষ্কাশনের পথ রেখেই বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের করার কথা থাকলেও সেই পথ বন্ধ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণেই পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে মানা হয়নি মৎস্য ঘের নীতিমালাও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকার ইটাগাছা, কামালনগর, বদ্দিপুর, পুরাতন
সাতক্ষীরা, ঘুড্ডির ডাঙ্গি, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কাটিয়া, ঝুটিতলা, লস্করপাড়া, ইটাগাছা, বাগানবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তবে সরকারি খাল ও পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে সামান্য বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আনিসুর রহিমসহ অন্যান্য নাগরিক নেতারা। নাগরিক নেতারা মনে করেন, সাতক্ষীরা সদর ও পৌরসভা মিলে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার শিকার এসব এলাকায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পঁচা পানিতে ছড়াচ্ছে রোগবালাই। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ডেঙ্গু আতঙ্ক বেড়েছে এসব এলাকায়।
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা জরুরী। সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলার আন্তঃনদী ও খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জেলার সর্বসাধারণের মতামত নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে নদী ও খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।