দিঘলিয়া এমএ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় টিকা কেন্দ্রে আগত লোকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কর্তব্যরত আনসার সদস্য জানান দিলেন সদর কেন্দ্রে ঢুকতে সদর ইউপি চেয়ারম্যানের টিকিট লাগবে।
এলকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিয়ারউদ্দিন বাওয়ালী। বয়স ৭৮ বছর। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় ৭ আগস্ট সকাল ৯ টার আগেই নির্বাচিত কেন্দ্র দিঘলিয়া এম এ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষায় আছেন সরকার ঘোষিত গণটিকা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য। হাতে অনলাইনে করা রেজিস্ট্রেশন টিকিট থাকা সত্ত্বেও কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর সদস্য টিকাদান কেন্দ্রে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। বলছেন ভিতরে ঢোকা এবং টিকা নেওয়ার জন্য দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা ফিরোজ হোসেনের নাম উল্লেখপূর্বক জানান, চেয়ারম্যান সাহেবের টিকিট লাগবে।
সিয়ারউদ্দিন বাওয়ালী এলাকার কয়েকজনের অনুরোধে ভিতরে ঢুকে টিকাদান কেন্দ্রে নির্ধারিত কর্মীর কাছে যেয়েও চেয়ারম্যান সাহেবের বিশেষ টিকিট না থাকার কারণে টিকা নিতে ব্যর্থ হয়ে বেলা ২ টার সময় মুখ কালো করে বাড়ি ফিরে যান। সিয়ারউদ্দিন বাওয়ালীর মতো অনেকেই ওই কেন্দ্রে চেয়ারম্যানের বিশেষ টিকিট না থাকার কারণে বেলা ৩ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।ফলে সরকারের করোনা মহামারী প্রতিরোধ মারাতœকভাবে বাধাগ্রস্থ হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শনিবার গণটিকা কার্যক্রম সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহাবুবুল আলম, দিঘলিয়া থানা কর্মকর্তা ইনচার্জ মোঃ আহসানউল্লাহ চৌধূরীসহ টিকাদান কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেক ওয়ার্ডের ২০০ জনকে টিকিট দেওয়া হবে। যারা নির্ধারিত কেন্দ্রে এ টিকিট প্রদর্শনপূর্বক টিকা নিতে পারবেন। কিন্তু দিঘলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা ফিরোজ হোসেন ওই টিকিটের সঙ্গে নিজের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সংসদ এবং খুলনার শেখ পরিবারের ২ জনের ছবি সম্বলিত আরেকটি টিকিট বিতরণ করেন।
বিষয়টি গতকাল থেকে এলাকায় জানাজানি হয় এবং শনিবার সকাল থেকে এলাকায় ’চেয়ারম্যান সাহেবের বিশেষ টিকিট’ না হলে টিকা নেওয়া যাবে না বলে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। টিকাদান কেন্দ্রের ভেতরও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক মহিলা কর্মীকে চেয়ারম্যান সাহেবের বিশেষ টিকিট ছাড়া টিকা দেওয়ায় চেয়ারম্যান সাহেবের অনুসারীদের তার কাছে কৈফিয়ত চাইতে দেখা যায়।
এ দিকে দিঘলিয়া উপজেলার অন্য ৫ টি ইউনিয়নে সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে গণটিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলাধীন ৬টি ইউনিয়নে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৬০০ জনকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়।
সকাল থেকে খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহানাজ বেগম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আলীমুজ্জামান মিলন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবুল আলম ৬ টি ইউনিয়নের টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।