খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামে খুলনায় নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বাজাতে নিষেধ করায় ইমামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জের ধরে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে মসজিদ-মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর চালিয়েছে। শুক্রবার রাতে ঘটনার সূত্রপাত হলেও শনিবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলায় ১০জনকে আটক করেছে। তবে মুসলিমদের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় ইমাম বের হয়ে পূণরায় নিষেধ করলেতাকে হিন্দু এক ব্যক্তি তাকে ধাক্কা দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনা মুছল্লিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রাতেই সে ঘটনা শেষ হয়।
এদিকে, এ ঘটনার জের ধরে শনিবার মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে মসজিদ-মন্দির ও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) খান মাসুম বিল্লাহ, রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী, পূজা উদযাপন পরিষদ রূপসা উপজেলার সভাপতি শক্তিপদ বসু, সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল সেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শিয়ালী পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৫ আগষ্ট) স্থানীয় শিয়ালী পুরাতন জামে মসজিদে এশার নামাজ চলাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মসজিদের সামনে গানবাজনা শুরু করে। এ অবস্থায় ওই মাসুম নামে সমজিদের একজন মুছল্লি তাদের নিষেধ করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাকে মারতে যায়। এ সময় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিন বের হয়ে নামাজের সময় শব্দ না করার জন্য তাদের অনুরোধ করলে তারা মাসুমকে মারধরের হমকি দিয়ে চলে যায়। পরে শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূণরায় এসে মসজিদের সামনে বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং উলুধ্বনী দিতে থাকে। এ অবস্থায় তিনি বের হয়ে নামাজের সময় তাদের শব্দ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তখন হিন্দু এক ব্যক্তি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে মুসল্লী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রাতেই সে ঘটনা শেষ হয়। তবে, তিনি ৭ আগষ্টের হামলা ও ভাংচুরের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
পূজা উদযাপন পরিষদ রূপসা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ গোপাল সেন বলেন, ৬ আগষ্ট রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাম সংকীর্তনে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা চলছে। তবে, তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন কর্তৃক ইমামের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন, মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় পূঁজা উদযাপন পরিষদ রূপসা উপজেলা শাখার সভাপতি শক্তিপদ বসু বাদি হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় ১০জনকে আটক করা হয়েছে। তবে মুসলিমদের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।