শেরপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে ব্রহ্মপুত্র সেতুর ইজারাদারের চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর মামলায় অবশেষে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার তুষার রঞ্জন দাস রিপন (৪৩) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে।
সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিন ফারজানার কাছে সে নিজেকে জড়িয়ে সাথে থাকা অন্যান্যের নাম প্রকাশ করে ওই স্বীকারোক্তি দেন। তুষার রঞ্জন দাস রিপন নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের হিরা লাল দাসের ছেলে এবং আন্তঃজেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের নেতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পরিদর্শক খন্দকার শহিদুল হক।
এদিকে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যাক্তির জবানবন্দি প্রদানের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর ওই মামলার মূল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। সূত্রমতে, গ্রেফতারকৃত ওই ব্যাক্তি ইতোপূর্বে নেত্রকোনা কারাগারে হাজতে থাকাবস্থায় ওই ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা ও ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনিসহ মোট ৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন দুটি মোটরসাইকেলে, অন্যজন প্রাইভেটকারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত তুষার রঞ্জন দাস রিপনকে গোপন সংবাদ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তার ভিত্তিতে রোববার ময়মনসিংহের গাঙিনারপাড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পিবিআই অফিসে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদকালে সে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার সাথে থাকা অন্যান্যের নামও প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এখন তার জবানবন্দি মোতাবেক ঘটনায় জড়িত অন্যান্যের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি আন্তঃজেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য এবং তার বিরুদ্ধে নেত্রকোনা ও জামালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জামালপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীন জানান, ব্যবসায়ীর মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ে ওই চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেফতারকৃত আন্তঃজেলা ডাকাত-ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় নেতা ঘটনায় সেসহ কে কে জড়িত তা প্রকাশ করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হলো। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতার করে দ্রুতই তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে বলেও তিনি আশা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ রোববার দুপুরে শেরপুর-জামালপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর ইজারাদারের অংশীদার ব্যবসায়ী নূর হোসেন তার ভাতিজা মোটরসাইকেল চালক লিটনকে নিয়ে ইজারার কিস্তির ৩৫ লাখ টাকা মোটরসাইকেলযোগে ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার পথে শহরের মধ্যশেরী এলাকায় ৫ সদস্যের একটি ছিনতাইকারী দল ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই নূর হোসেন বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের হাতে মোটরসাইকেল চালক লিটনসহ সন্দেহভাজন ৩ জন গ্রেফতার হলেও উদঘাটন হয়নি কোনো রহস্য। পরবর্তীতে মামলাটি জামালপুর পিবিআইয়ের কাছে বদলি হয়।