পটুয়াখালীর বাউফলে চাঞ্চল্যকর ১০ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র বশির হত্যা মামলার রায়ে ৩০ বছরের সাজার তথ্য গোপন করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরী নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কনকদিয়া ইউনিয়নের আলামিন সিকদার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ হত্যা মামলার বাদি বশিরের বাবা আবদুর রশিদ প্রায় ১৭ বছর ধরে সন্তান হারানোর কষ্ট নিয়ে থাকলেও এ হত্যা মামলার আসামি আল আমিন শিকদার স্ব-পদে চাকরীতে বহাল রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে কনকদিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ঝিলনা গ্রামে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে,কনকদষ্টিয়া ইউনিয়নের ঝিলনা গ্রামের আবদুর রশিদ হাওলাদারের দ্বিতীয় ছেলে বশির আয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র ছিল। ১৯৯৩ সালে ঝিলনা লঞ্চঘাটে একটি ক্লাবঘর নির্মাণ নিয়ে কথাকাটাটির এক পর্যায়ে একই গ্রামের লিটন সিকদার ও আলামিন সিকদারের নের্তৃত্বে ৬-৭ জনের একটি দল স্কুল ছাত্র বশিরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় বাউফল থানায় বশিরের বাবা আবদুর রশিদ হাওলাদার বাদি হয়ে স্থাণীয় চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, খসরু হাওলাদার,মিজানুররহমান,আলামিন সিকদার, ও লিটন সিকদারসহ ১১জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা (০২/৯৩) দায়ের করেন। পরে বাউফল থানা পুলিশ আব্দুুল জলিল, খসরু, মিজানুর রহমান,আলামিন সিকদার,ও লিটন সিকদার সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজকোর্ট আদালতে চার্যশীট দাখিল করেন যার নং জি আর ৮৬/৯৩। ২০০৮ সালে মামলাটি বিচারের জন্যে বরিশাল দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে প্রেরণ করেন। দ্রুত বিচার টাষ্ট্রইব্যুনাল যার মামলা নং ০৩/০৮ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ০৭/১২/২০০৮ সালে স্কুল ছাত্র বশিরকে হত্যার দায়ে কনকদিয়া ইউনিয়নের সাবেক প্রয়াত চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, খসরু, মিজানুররহমান, আল আমীন ওরুপে আলাআমীন সিকদার ও লিটন সিকদারকে ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবৎজীবন (৩০বছর) সশ্রম কারাদ- সহ ৫০হাজার টাকা জড়িমানা অনাদায়ে এক বছর করিয়া কারাদ- ভোগ করার আদেশ দেন। আদালতের রায়ের পরে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এ হত্যা মামলায় কিছুদিন সাজা খেটে আসামীগন হাইকোর্ট বিভাগে একটি ফৌজদারী আপীল (৮৭১৯/০৮) রুজু করেন। মাননীয় বিচারপতি এ,কে,এম আসাদুজ্জামান এবং মাননীয় বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল গঠিত বেঞ্চ বিগত ১৪/৫/০৯ তারিখ আসামীদের ০৬মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। উচ্চাদালতে জামিন নিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি ধমকি ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এর পরে আলামিন ২০১৩ সালে কনকদিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যসহকারী পদে চাকরী নেয় এবং এখনো স্বপদ বহাল রয়েছেন। বশিরের বাবা আবদুর রশিদ কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, তার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে বিচারে তাদের (যাবৎজীবন) ৩০ বছর সাজা হয়েছে, তাদের সরকারী চাকুরী হয় কিভাবে। আমি মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ বিচারের রায় কার্যকর করার দাবী জানাচ্ছি। এ দুনিয়ায় না হলেও আল্লাহর আদালতে এর একদিন বিচার হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসহকারী আলামিন সিকদার সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বর্নিত মামলায় সাজা ও জড়িমানার কথা স্বীকার করে বলেন, এ মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। মামলা নিস্পত্তির পরে চাকুরী হয়েছে। তথ্য গোপনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ডিপার্টমেন্ট জেনে শুনে মামলা নিস্পত্তির পরে আমাকে চাকুরী দিয়েছে। মামলা নিস্পত্তিরি কাগজ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন এটা কোর্টের ব্যাপার। প্রতিপক্ষ তাকে ফাঁসাতে মিথ্যা রটিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, আশ্চর্য বিষয়, কি বলেন, হত্যা মামলার আসামীর সরকারী চাকরী! অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন কোন ব্যক্তি ফৌজদারি কোন মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সরকারী চাকরী পাওয়ার কোন বিধান নাই বলে জানান।