খুলনা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ জানিয়েছেন, ভৈরব সেতুর স্থান পরিবর্তনের কোন সুযোগ আপাতত আছে বলে মনে হয় না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সংক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের পর তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
মুহসিন মোড় হতে রেলিগেট পর্যন্ত সংক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে ভৈরব সেতুর স্থান পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক বিষয়টি মীমাংসার জন্য একটি নির্দেশনামূলক আদেশ প্রদান করা হয়।
এই নির্দেশনার ব্যাপারে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, “ভৈরব সেতু সুষ্ঠুভাবে নির্মাণের জন্য মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি জরুরী সভা আহবান করা হয়। উক্ত সভায় মুহসিন মোড় হতে রেলিগেট পর্যন্ত ব্যবসায়ী সংগঠনের ৪ জন প্রতিনিধি যথাক্রমে সংগঠনের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান, সহ-সভাপতি চৈতন্য, সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ এস এম আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ভৈরব সেতুটি নির্মাণের ডিপিপি প্রস্তুতের আগে সাব-সোয়েল ইনভেস্টিগেশন, সম্ভব্যতা যাচাই, হাইড্রলজি এবং মোরফোলজি তৈরীর সময় প্রকল্প সাইটটি অনেকবার সরেজমিনে পরিদর্শন, সার্ভে এবং পরিমাপ করা হয়। সেতুর সাইট এর সম্ভব্যতা যাচাই, হাইড্রলজি এবং মোরফোলজি যাচাইয়ের মাধ্যমে সেতুর শ্রণীবিন্যাশ চূড়ান্ত করে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ সেতু ম্যানেজমেন্ট উইং- এর স্বারক নং- ২৩৫, তারিখ ১২/০৮/২০১৮ইং মোতাবেক সেতুর নকশা চূড়ান্ত করা হয়। অতঃপর উক্ত প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরপর ১৭/১২/২০১৯ ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক সভায় অনুমোদিত হয় এবং ২২/১১/২০২০ তারিখে প্রকল্পটির কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
সওজ কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজ বর্তমানে পুরোদমে চালু রয়েছে। বিশেষ করে পাইল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রম প্রতিমন্ত্রী, কেসিসি মেয়র, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীবৃন্দ, ঐ এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ সরজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভূমি অধিগ্রহণসহ উক্ত সেতুর কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে তাগিদ প্রদান করেন। বর্তমানে উক্ত সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুতরাং এখন আপাতদৃষ্টিতে কাজের সাইট স্থানান্তরের কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
এক সূত্রে জানা যায়, খুলনা সড়ক বিভাগাধীন দিঘলিয়া (রেলিগেট) -আড়ুয়া- গাজীরহাট-তেরখাদা (জেড ৭০৪০) খুলনা সড়কাংশের ১ম কিঃমিঃ এ ভৈরব সেতু নির্মাণের লক্ষে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার অন্তর্গত ৪ নং মহেশ্বরপাশা, ১৩ নং দেবনগর ও ১৪ নং দিঘলিয়া মৌজার ১৭.৪৯ একর বা ৭.০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ৪ নং মহেশ্বরপাশা মৌজায় ভৈরব সেতু নির্মাণের লক্ষে মুহসিন মোড় হতে রেলিগেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি থাকায় উক্ত ভূমির উপর দিয়ে ভৈরব সেতু, এপ্রোচ সড়ক, ইন্টার সেকশন নির্মাণের জন্য উক্ত ভূমি প্রয়োজন হবে।
সওজ কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত ভূমির দাগগুলো বাংলাদেশ রেলওয়ের রেকর্ডীয় মালিকানাধীন ভূমি হওয়ায় নতুন করে ইজারা/নবায়ন না দেওয়াসহ ইতোপূর্বে সকল ইজারা বাতিল করে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাঁকা/ সেমিপাঁকা স্থাপনা অপসারণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে এ সেতুটির কাজ সমাপ্ত হলে দিঘলিয়া তেরখাদা, মোল্লাহাট উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে খুলনা জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই সেতুটি অত্র এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
তিনি বলেন, “অফিসিয়ালি সড়ক বিভাগ, খুলনা কর্তৃক উক্ত রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আপীল করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। হাইকোর্টের কার্যক্রম শুরু হলেই আমাদের প্যানেল আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে মুভ করবেন।”
এক সূত্রে জানা যায়, মুহসিন মোড় থেকে রেলিগেট পর্যন্ত নির্মাণাধীন ভৈরব সেতুর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি রয়েছে ৭ দশমিক ১১৩৬ একর বা ২.৮৮ হেক্টর। এ সব জমিতে ৫৭ টি দোকান ঘর, ৫ টি বাড়ি, ১টি গুদাম, ১টি পাট গোডাউন, ১ টি মিল, ৩ টি কোয়াটার রয়েছে। মুহসিন মোড় থেকে রেলিগেট পর্যন্ত রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি, মিল, গোডাউন তৈরি করা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিবর্গের পক্ষে মোঃ আব্দুল বাশার খান হাইকোর্টে ঐ রিট করেন।