খুলনার পাইকগাছায় উপজেলা সার্ভেয়ার একই জমি সরকারি আবার ব্যক্তিগত বলছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাসহ সচেতন এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা দৃষ্টি আকার্ষণ করছেন। ব্যক্তিগত জমি খাস করে ডিসিআর-না-কপোতাক্ষ নদ ভরাটী খাস জমি ডিসিআর? একই জমি কখনো খাস সম্পত্তি হিসাবে ডিসিআরসহ লাল পতাকা আবার কখনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে সবুজ নিশানা টানানো হচ্ছে। অনিশ্চয়তা হয়েছে কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ! জরিপ ও পতাকা টানানো কাজটা করছেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো। গত বছর ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবসে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক যেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এর কয়েক দিন পর জায়গাটি নিজেদের মালিকানাধীন দাবি করে সেখানে প্রাচীর ও কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নেয় স্থানীয় অমিত সাধু ওরফে শান্ত গং। এ ছাড়া পাশে প্রাচীর দিয়ে অবৈধভাবে দখল নেয় এক দরিদ্র পরিবারের ক্রয়কৃত রেকর্ডীয় সম্পত্তি অভিজিত সাধু গং। বহুলালোচিত জায়গাটি বে-দখলের খবরে গত ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তৎকালীলণ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাতুল আলমের নেতৃত্বে কাটাতারের বেড়া অপসারণপূর্বক ঐ সম্পত্তির অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার হলেও প্রভাবশালী ভূমিদস্যু অভিজিত সাধু অবৈধ দখল থেকে যায় এ দরিদ্র পরিবারের ক্রয়কৃত রেকর্ডী সম্পত্তি। যা নাছিরপুর মৌজা এস.এ ১৯৩ খতিয়ানে, দাগ ৪২৬/৫৯৩। এর আগে গত বছর ৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক কপিলমুনি মুক্ত দিবসে কপোতাক্ষ নদ ভরাটী জমিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক রণাঙ্গন কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। তারও আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাতুল আলম, স্থানীয় ইউএলএও হাসমত, উপজেলা সার্ভেয়ার মো. কাওছার আলীসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে কমপ্লেক্সের স্থান নির্ধারণ ও জরিপকার্য সম্পন্ন করেন। তবে সাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাতুল আলমের বদলিকালীন সময়ে আধুনিক কপিলমুনি রূপকার রায়সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ভ্রাতা কুঞ্জবিহারী সাধুর ওয়ারেশরা (৪জন) ফের ঐ সম্পত্তি তাদের বলে দাবি করে পুনরায় কাটাতারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছে। কুঞ্জবিহারীর প্রথম স্ত্রী বড় ছেলে নারায়ন সাধু ভারতে অবস্থান করায় ছোট স্ত্রী ৪পুত্র ওয়ারেশ দাবী করে সৎ ভাই এর সম্পদ-সম্পত্তি আত্মসাৎ করছে। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ২০১৩সালে কপোতাক্ষ নদ চরভরাটি নাছিরপুর মৌজা খাস খতিয়ানের ৫৯৫দাগের বিস্তীর্ণ সম্পত্তির মধ্য থেকে স্থানীয় জনৈকা মালঞ্চ বিবি নামের এক গৃহ ও ভূমিহীন মহিলা মিস কেস নং-৮৭৬/১২-১৩ মাধ্যমে ১০শতক খাসজমির ডিসিআর প্রাপ্ত হন। তবে বরাবরই ডিসিআর প্রাপ্ত হয়েও ঐ সম্পত্তি দখল নিতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হয়। যা চলতি সন পর্যন্ত ডিসিআর মূলে সে মালিক। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা-পাল্টা মামলারও ঘটনা ঘটে। বিষয়টি অবহিতপূর্বক তখন ওই মহিলার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐবছরে তিনি ৩০জানুয়ারি ২০১৮, ০৫.৪৪.৪৭০০.০৩১.৩৩.০০১.১৮-১৪৫৫নং স্মারকে দখল ও সীমানা বুঝে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাইকগাছাকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মহিলা বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তির দখল নিতে গেলেও বাঁধার মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হন। এরপর সর্বশেষ গত বছরের ৫মে পুনর্দখল বুঝে পেতে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করলে ইউএনও ৬ মে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে কপিলমুনি ভূমি অফিসের ইউএলও এবং স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেন। যার প্রাপ্তি নং-২৯৪। সর্বশেষ ইউএনও অনুমতিতে স্থানীয় ইউএলও-স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ১৪মে সকালে কপোতাক্ষ তীরের বন্দোবস্তপ্রাপ্ত খাসজমিতে তৃতীয় দফায় ঘর বাঁধতে গিয়েও দখলদারদের বাধার সম্মুখীন হন। ঐ ঘটনায় ১৬ মে পাইকগাছা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থানীয় দখলদারদের একজন তপন কুমার সাধুর ছেলে অমিত সাধু ওরফে শান্ত বাদী হয়ে স্থানীয় ইউএলএও মো. জাকির হোসেন ও স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলাও করেন। যা পিবিআিই তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যর মধ্যস্থতায় মহিলাকে অন্যত্র পূণর্বাসন করলে ফের ঐ সম্পত্তির দখলে যান অমিত ওরফে শান্ত সাধু গং। এরপর কপিলমুনি মুক্ত দিবসকে সামনে রেখে সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক রণাঙ্গন কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিলে নড়ে চড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠকে ঐ এলাকা নির্ধারিত স্থান বলে চিহ্নিত ও কয়েক দফায় সার্ভেয়াররা জরিপ করে সীমানায় লাল নিশান টানিয়ে দেন। এরপর গত বছর ৯ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। তবে এরপরও বন্ধ হয়নি এর দখল কার্যক্রম। সম্প্রতি তারা ফের দরিদ্র পরিবারে ব্যক্তিগত ও সারকারি খাস ভিত্তিপ্রস্তরসহ গোটা এলাকায় প্রাচীর ও কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ’৮০-এর দশক থেকে প্রথমে কপোতাক্ষের ব্যাপক ভাঙন ও পরবর্তী পর্যায়ে নাব্যতা হ্রাসে কপিলমুনি সদরের কপোতাক্ষের তীর জুড়ে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ চরভরাটি খাসজমি, যা সরকারের সর্বশেষ মানচিত্রে ১নম্বর খাস খতিয়ানের ৫৯৫ দাগে চিহ্নিত হয়। ওই দাগের পাশেই এস.এ ১৯৩ খতিয়ানে ৪২৫, ৪২৬/৫৯৩ দাগে ক্রয়সূত্রে মালিক ননীবালা অধিকারী এবং এস.এ ১৯২ খতিয়ানে ভিপি “ক’’ তালিকাভূক্ত ০.৪৮ একর জমি। যা স্বগীয় রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু তার সম্পদ ও সম্পত্তি ভাবী বংশধর দাবী না করতে পারে তার জন্য পাথর খোদায় করে লিখে বিনোদগঞ্জ বাজার অভ্যন্তরে তৎকালনি সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক বর্তমান বণিক সমিতি অফিস সম্মূখ দেওয়ালে স্থাপন করে গেছেন। কপোতাক্ষ নদ খননকৃত মাটি দুই পাড়ে ফেলায় কপিলমুনি অংশে দৃশ্যমাণ হয় বিস্তীর্ণ খাস জমির। আর সেই সুযোগে শুরু হয় প্রভাবশালীদের দখলপ্রক্রিয়াও। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপুঞ্জ অবগত হওয়ার পর সর্বশেষ গত বছর ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঐ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন সচিব ইউসুফ হারুন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরাফাতুল আলমসহ সরকারি, বে-সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে এরপরও ভিত্তিপ্রস্তরসহ গোটা এলাকায় প্রাচীর আর কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখল করা হয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষে বলা হচ্ছে, যথা সময়ে সম্পূর্ণ সরকারি জমিতেই নির্মিত হবে মক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। কপিলমুনি আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার ফারুখ আহম্মেদ বলেন, স্থানীয় কতিপয় মহলের ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত নির্ধারিত স্থানে কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স শত ভাগ খাস জায়গায় নির্মিত হচ্ছে। সুতরাং ব্যক্তি বিশেষ এই জায়গা দখলের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারন মানুষের প্রশ্ন? খুলনা ডিসি মহাদয় যে দাগ (৫৯৫) ১নং খাস খতিয়ানে ডিসিআর প্রদান সহ উপজেলা সার্ভেয়ার দ্বারা জরিপ পূর্বক জমিতে লাল নিশান টানিয়ে দেন আবার একই জমি ১৩আগষ্ট শুক্রবার উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো ওখানে খাস সম্পত্তি নাই, ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে সবুজ পতাকা টানিয়ে দেন। তা হলে এত বছর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ডিসিআর দেওয়া হয়েছে? লাল আর সবুজ পতাকা অবসান হোক, কপোতাক্ষের তীর জুড়ে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ চরভরাটি খাসজমি উদ্ধার সহ দ্রুত কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন ধ্বংস হাত থেকে রক্ষা করতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং আগামী প্রজন্মে জন্য অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা হোক সচেতন এলাকাবাসীর দাবী।