করোনার মধ্যে কষ্ট কইরা চলতাছি। গরীব মানুষ, অসহায় জীবনের কেউ খবর নেয় না। খাইয়া না খাইয়া বাইচ্চা আছি। অহন খুব কষ্ট কইরা চলতাছি, এই বাঁচার দাম নাই। এডা কম্পিউটার কিনবার পাইলে কোন রকম চলবার পাইতাম। মনের ভেতর জমে থাকা পুঞ্জিভুত কষ্টের কথাগুলো বলছিল, শেরপুরের নালিতবাড়ী উপজেলার বারমারী এলাকার আন্দারুপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর ছেলে আবদুর রহমান ওরফে আবদুল (৩৬)। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছেলে আবদুল জন্মের ৮ বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে পঙ্গুত্ব জীবন বরন করেছে। পায়ে হেটে চলার ক্ষমতা নেই একটি বেসরকারি সংস্থার দেওয়া হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে। আবদুল পৈত্রিক সুত্রে মাত্র ৫ শতাংশ তথা এক কাঠা বাড়ি ভিটা জমি পেয়েছে। এ ছাড়া আবাদি কোন জমি নেই। বর্তমানে থাকার ঘরটিও ভাঙা। কষ্ট করে ছোট করে রাত কাটান।
আব্দুল জানায়, ৮ বছর বয়সে প্রথমে ডান পায়ের গোড়ালী ফুলে যায়। তার পরে ধীরে ধীরে সম্পুর্ণ অবশ হয়ে সরু ও দুই পা একত্রে জড়ো হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে কবিরাজী চিকিৎসা করলেও কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে এভাবেই অসহায় জীবন পার করছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে স্থানীয় লোকদের আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে বিশেজ্ঞ ডাক্তার আব্বাস উদ্দিনের নিবির তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ৬ মাস চিকিৎসা গ্রহণ করে। এ সময় ডাক্তার তার ডান পায়ে অপারেশন করেন এতে পায়ের জড়তা ছাড়ে। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাম পায়ে আরো ৩টি অপারেশন করতে হবে। তাহলে সম্পুর্ণ সুস্থ্য না হলেও অন্ততঃ হুইল চেয়ারে নয় লাঠিতে ভর করে কোন রকমে পায়ে হাটতে পারবে। ডাক্তার আব্দুলের চিকিৎসার খরচের সহযোগীতাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডাক্তার আব্বাস উদ্দিনকে অন্যত্র বদলী করায় আব্দুলের আর চিকিৎসা হয়নি। নতুন ডাক্তার যোগদান করে আব্দুলকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়। আর বাকি ৩ টি অপারেশন করানো সম্ভব হয়নি। এখন হুইল চেয়ারই একমাত্র ভরসা। আব্দুলের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান আছে। আবদুল জানায় পঙ্গু ভাতার সামান্য টাকা দিয়ে সংসারের খরচ হয় না। কিন্তু স্ত্রী সন্তানসহ ৫ জনের সংসারের আহার যোগাবে কিভাবে। উপায়ান্তর খুজে না পেয়ে পাশ্ববর্তী বারমারী বাজারে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে প্রথম দিকে গ্যাস ম্যাচের গ্যাস ভরানো, মোবাইল চার্জ করা ও লাইট মেরামতের কাজ শুরু করে। এতে প্রতিদিন রোজগার হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এ থেকে ঘর ভাড়া ৮০০ টাকা। তার এই করুন হাল দেখে বাজার কমিটি নাইট গার্ডের টাকা নেওয়া বাদ দিয়েছে। বর্তমানে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন যায় রাত কাটে তার।
আব্দুল বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটি কম্পিউটার কিনতে পারলে তার আয় আরেকটু বাড়তো, আমার ট্যাহা নাই, কম্পিউটার কিনে মোবাইলের গান, রিংটোন ডাউনলোড করে টাকা রোজগার করতে পারতাম। ওহনও দুনিয়ায় ভালা মানুষ আছে আমারে যদি কোন ধনী মানুষ একটি কম্পিউটার দান করতো তাইলে আমার খুব উফকার অইতো। স্বপ্ন পুরণ হবে কি না জানি না। তবে বেচেঁ থাকতে চাই সমাজের বোঝা হয়ে নয় অন্য দশজন মানুষের মতো।