নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবোঝাই ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে নদী পাড়ি দিচ্ছেন অর্ধলাখ মানুষ। বিপুল পরিমান যাত্রীর জন্য নাগরিক সুবিধার ছোঁয়া নেই এ খেয়াঘাটে। নদীর ভাঙনে ঘাটের বেহাল অবস্থা।
খেয়ার মাঝিমাল্লা ও বিআইডব্লিউটিএ’ সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক অর্ধলাখ মানুষ কীর্তনখোলা নদী পাড়ি দিয়ে নগরীতে আসা-যাওয়া করেন। বিপুল পরিমাণ যাত্রীর চলাচলের সুবিধার্থে বিগত নয় বছর আগে তৎকালীন মেয়র এ ঘাটটি ইজারামুক্ত করেন। এরপর থেকেই বিআইডব্লিউটিএ কোনো দায়দায়িত্ব না নেয়ায় স্থানীয় একটি মহল কৌশলে খেয়াঘাটে দখলবাজি চালাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটার সময় নগরীর প্রান্তের ঘাট থেকে পানি প্রায় আট ফুট নেমে যাওয়ার পরেও পায়ের গোড়ালি ডুবিয়ে যাত্রীদের ট্রলারে ওঠানামা করতে হচ্ছে। ঘাটের নগরীর প্রান্তে বিআইডব্লিউটিএ’র জমি দখল করে স্থাপিত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট। যেকারণে এখানে সবসময়ই জট লেগেই থাকে। অপরদিকে চরকাউয়া প্রান্তে নদী ভাঙনের মুখে পরায় যাত্রীদের ট্রলারে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। ভরা বর্ষায় খেয়া পারাপারে সবচেয়ে শংকার বিষয় হচ্ছে বেপরোয়া ট্রলার চালানো।
গত ১৭ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে খেয়াঘাটে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, প্রতি মুহুর্তে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভর্তি করে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করছে। ট্রলারগুলো ঘাটে ভেড়ানোর সময় একটি আর একটির ওপর বেপরোয়াগতিতে আছড়ে পরছে। এতে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পরলেও সেদিকে ট্রলার চালকদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
চরকাউয়য়া এলাকার বাসিন্দার শাওন খান বলেন, যুগ যুগ ধরে তারা দুর্ভোগ সহ্য করেই এ খেয়াঘাট থেকে যাতায়াত করছেন। ঘাটের অবস্থা বেহাল অবস্থায় থাকলেও প্রতিনিয়ত ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে তাদের ঝুঁকি নিয়ে কীর্তনখোলা নদী পারি দিতে হচ্ছে। অথচ এলাকার সবচেয়ে বড় খেয়াঘাটে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে কারো কোন উদ্যোগ নেই।
ঘাটের মাঝি রাকিব হাওলাদার জানান, তারা সমিতির আওতায় এখানে ট্রলার পরিচালনা করেন। ট্রলার চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তিনি আরও বলেন, ওপারের নেতারা ঘাট পরিচালনা করছেন।
চরকাউয়া মাঝিমাল্লা সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর আলী বলেন, এ খেয়াঘাটে ২৫৫ জন মাঝিমাল্লা রয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ এ ঘাট দিয়ে ডিসিঘাট, গোমা, কাটাদিয়া, নেহালগঞ্জ, লাহারহাট, টুমচরে যাতায়াত করেন। তিনি আরও বলেন, তৎকালীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন এ ঘাটের ইজারা প্রত্যাহার করেছিলেন। এরপর আর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটের তদারকি করছে না। ঘাটে জনদুর্ভোগ ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে ওমর আলী বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝিদের সতর্ক করা হয়। ইজারা না নিলেও একটি মহলের ঘাট নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে স্থানীয় যাত্রী ও মাঝিমাল্লাদের তথ্যমতে, এ খেয়াঘাটের দুই প্রান্ত থেকে প্রতি ঘন্টায় ১২০টি ট্রলার যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন করে যাত্রী তোলা হয়। সে হিসেবে এক ঘন্টায় দুই হাজার ৪০০ মানুষ কীর্তনখোলা নদী পাড়ি দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নকে নগরীর সাথে বিচ্ছিন্ন করেছে কীর্তনখোলা। এ ইউনিয়নগুলোর সীমানা ঘেঁষা বাকেরগঞ্জ উপজেলার আরও সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে। বরিশাল থেকে সড়কপথে ভোলা জেলা ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় যেতে হয় চরকাউয়া খেয়া পাড়ি দিয়ে। এসব কারণে এ খেয়াঘাটে ২৪ ঘন্টা যাত্রী পারাপার হয়। এসব যাত্রী পারাপারের ইঞ্জিন চালিত ট্রলারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চরকাউয়ার ওপারের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও তার সহযোগিরা।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে চরকাউয়া খেয়াঘাট উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর খেয়াঘাট তাদের দখলে নেই। তিনি আরও বলেন, ঘাটের ইজারা না হলেও একটি পক্ষ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে আসছেন। প্রতিদিন আদায় করা কয়েক লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে না গেলেও ব্যক্তি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।