পটুয়াখালীর বাউফল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সিজারিয়ান সেকশনের সকল সুবিধা থাকা সত্বেও সিজারিয়ান বেডে ভর্তি মিতু আক্তার (২০) নামে এক প্রসুতিকে ফুসলিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন “সেবা ক্লিনিক” নামের একটি ক্লিনিকে সিজার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালের একটি দালাল চক্রের সহযোগিতায় প্রসুতিদের হাসপাতালে সিজার না করিয়ে টাকার বিনিময়ে ফুসলিয়ে ওই ক্লিনিকে সিজার করিয়ে গলাকাটা টাকা আদায় করা হয়। দালাল চক্রের তালিকায় ডাক্টার, নার্স ও স্টাফদের নাম রয়েছে। এ ঘটনায় সচেতন জনতা ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নিতীর অভিযোগ আনলে ১০ বছর পর স্থানীয় সাংসদ আলহাজ¦ আ.স.ম ফিরোজ এমপি এর নির্দেশনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাঃ নুর আহম্মেদ সাঈদকে ৬মাসের ছুটি দিয়ে এ্যানেসথেসিয়ার প্রশিক্ষন করিয়ে ২৩ জুন আনুষ্ঠানিক সিজারিয়ান সেকশন চালু করেন।
সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বাবুল নলীর স্ত্রী মিতু (২০) প্রসব ব্যাথা নিয়ে ৯ আগস্ট বাউফল হাসপাতালে প্রসূতি বেডে ভর্তি হন। এ বিভাগে সিজারিয়ান দায়িত্বরত ডাঃ নুপুর বেগম ও এসিষ্ট দায়িত্বরত ডাঃ শামীম আরা হিরা ১০ আগস্ট বেলা ২টায় মিতুকে সিজারের জন্য রক্ত সংগ্রহ সহ মানুষিক প্রস্তুতি নিতে বলেন। ১০ আগস্ট ১২টার দিকে ডাঃ নুপুর এর প্রেসক্রিপসন মতে সিজারের জন্য ওষুধ পত্র কিনে আনেন বাবুল। ২টার দিকে যখন সিজারিয়ান বোর্ডের অন্যান্ন সদস্যগন সিজারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন এমন সময় ডাঃ নুপর মিতুর স্বামীকে ডেকে বলেন সিজার এখানে (সরকারী হাসপাতালে) সম্ভব নয়, আমাদের লোকজন নেই। হাসপাতালের গেট সংলগ্ন সেবা ক্লিনিকে নিয়ে যান, আমি নিজে সিজার করবো। এ কথা শুনে বাবুল কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পরেন এবং নুপুরকে অনুরোধ করতে থাকেন।
মিতুর স্বামী সাংবাদিকদের বলেন ডাঃ নুপুর কোন ভাবেই হাসপাতালে সিজার করতে রাজী না হওয়ায় এবং মিতুর প্রসব ব্যাথা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরুপায় হয়ে মিতুকে ২টা ২০মিনিটের সময় সেবা ক্লিনিকে ডাঃ নুপুরের রেফারেন্সে ভর্তি করান। ডাঃ নুপুর নিজে ওই ক্লিনিকে ৪টার দিকে সিজার করেন এবং এ সিজার অপারেশনে মিতুর একটি ছেলে বাচ্চা হয়েছে। ক্লিনিকের ভর্তি স্লিপে ডাঃ নুপুরের নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে। মিতুর স্বামী ডাঃ নুপুর ও ডাঃ হিরার বিচার দাবী করে বলেন, যেখানে হাসপাতালে সিজার করলে ওষুধপত্র সহ ৪হাজার টাকা খরচ হত সেখানে ক্লিনিকে ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে, বিড়ম্ভনাতো আছেই। ডাঃ নুপুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এ বিষয়ে ইউএইচএফপিও এর কাছ থেকে জেনে নিতে বলে ফোন কেটে দেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ডাঃ নুপুরের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানা গেছে, ক্লিনিক গুলোতে কাগজে কলমে চিকিৎসক, নার্স ও এ্যানেসথেসিষ্ট থাকলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব ক্ষীন। অদক্ষ লোক দিয়ে সিজার করানোর ফলে এসব ক্লিনিকে প্রসুতি মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা জনিত কারণে নিরাময় ক্লিনিকটি হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ হলেও সম্প্রতি মালিকানা ঠিক রেখে নাম পাল্টিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সেবা নামের ক্লিনিকটি বিভাগীয় তদন্তে শর্তপুরন না করায় সিভিল সার্জন তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ক্লিনিকটি বন্ধ থাকার কিছুদিন পর ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ নামের একজনকে দেখিয়ে ক্লিনিকটি চালু করলে ভুয়া প্রমানিত হলে তিনি বাউফল থেকে পালিয়ে গিয়ে যশোরে ভুয়া ডাক্টার হিসেবে গ্রেফতার হন। এসব ক্লিনিকে গত দু‘ মাসে ২শতাধিক সিজার হলেও হাসপাতালটিতে হয়েছে মাত্র ৫টি।
উল্লেখ্য এর পূর্বে সাধারন ডেলিভারীও ক্লিনিকগুলোতে সিজার করার পরামর্শ দেয়া হত, যা সাধারন মানুষের জন্য ছিল কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।