উত্তরাঞ্চলে সারের বাজারে আগুনের আঁচ পুরোপুরি অনুভূত হচ্ছে। সেই আঁচে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কৃষককুলের। মাঠ পর্যায়ে নজরদারি নেই বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী কৃষকের। ভাদ্র মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে শেষ হবে আমনের চারা রোপণ। বাংলা এ মাস থেকে আগাম শীতকালিন সবজি চাষে প্রস্তুতি নিচ্ছে গৃহস্তরা। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে আলু, কপি, মুলা, গাজর, সীম। এজন্য বহুগুণ বেড়েছে সারের চাহিদা।
গত ১০ দিনের ব্যবধানে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) সারের দাম বেড়েছে ৫শ টাকা। সবচেয়ে আগুন দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি টিএসপি সার। এ সারের দামের পরেই রয়েছে এম ও পি সার। বৃদ্ধি পেয়েছে ইউরিয়া সারের দামও। খুচরা সারের বাজারে ১ হাজার টাকা দামের টিএসপি সারের বস্তা ২ হাজার ৫শ টাকা, ৯শ টাকা বস্তা দরের এম ও পি সার ১ হাজার ৪শ টাকা ও ৭শ ৫০ টাকা বস্তা দরের ইউরিয়া সার ৮শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকরা যুগের পর যুগ ধরে টিএসপি, এম ও পি ও ইউরিয়া সার জমিতে ব্যবহার করে আসছে। এসব সার ব্যবহারেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে কৃষকরা। সে জন্য ওইসব সারের মূল্য আকাশ চুম্বি হয়েছে। অধিক দামের পরও কৃষকরা হুমরি খেয়ে পড়েছে ওইসব ব্রান্ডের সার কিনতে। বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) রংপুর জোনের যুগ্ম পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন ও দিনাজপুর জোনের যুগ্ম পরিচালক মোসাব্বের হোসেন জানান, পর্যাপ্ত পরিমান সারের মজুদ রয়েছে। তাহলে সারের দাম বাড়ছে কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, এ বিষয়টি তাদের এখতিয়ারে পড়ে না। কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে চলতি বছরে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় প্রায় ১২ লাখ হেক্টর জমি আমন চাষের আওতায় এসেছে। এজন্য ওইসব সারের প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে টিএসপি ও এম ও পি সারের মজুদ আছে প্রায় ২৫ হাজার টনের মতো। তারপরেও ঘাটতি থাকতে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন টিএসপি ও এম ও পির বদলে ডিএপি (ড্যাপ) সার জমিতে দেয়া হলে কৃষক দামে এবং ফলনে উভয় ক্ষেত্রে লাভবান হবে। তবে ডিএপি সার ব্যবহারে কৃষকদের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। অবশ্য প্রচার প্রচারনাও চলছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে জমিতে টিএসপি ও এম ও পি সার দিয়ে ফসলের গাছকে পুষ্ট করতে দিতে হয় বাড়তি ইউরিয়া সার। অথচ ডিএপি সার ব্যবহার করলে ফসফেটের চাহিদা যেমন মেটে তেমনি প্রয়োজনীয় ইউরিয়া সারও মিলে। কিন্তু কৃষকদের চলছে গো-ধরা অবস্থা। এদিকে খুচরা সার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন সারের ডিলাররা কৃষকের অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে সার বিক্রি করছেন।
কথা হয় কৃষক মজিদ, মনসুর, শফিক, আইনুল, আব্বাস, জাহাঙ্গীর ও কবিরের সঙ্গে। তারা বলেন আমনের চারা রোপনের একেবারে শেষ সময় এসে গেছে। সময় মত আশানুরূপ আকাশের বৃষ্টির পানি না মেলায় মওসুমের শেষ সময়ে কৃষকরা খুব দ্রুত আমনের চারা রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর চারা রোপনের পূর্বেই জমিতে দিতে হয় টিএসপি অথবা এম ও পি সার। এ কারণে বাজারে চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে। তারা আক্ষেপ ঝেড়ে বলেন সরকারি পক্ষ থেকে সঠিক মনিটরিং করা হলে এমন অবস্থায় কৃষকদের পড়তে হতো না। সারের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় কৃষি অধিদপ্তর রংপুর জোনের অতিরিক্ত পরিচালক বিধূভুষণ রায় ও দিনাজপুর জোনের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মাহবুবার রহমানের সঙ্গে। তারা সাফ বলে দেন মূল্য বৃদ্ধি বা কমার বিষয়টি দেখভাল করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে কৃষি অধিদপ্তরের কোন করণীয় নেই।
সারের চড়া বাজার বিষয়ে জানতে কথা হয় রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে টিএসপি সার সরবরাহ বন্ধ আছে। এ সারের বদলে আমরা ডিএপি দিচ্ছি। অন্য সারের দাম বেড়েছে কিনা তা জানা নেই। তবে কঠিনভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।