সুঠাম দেহের অধিকারি টকবগে যুবক উন্দা মিয়া (৩০)। সরাইল সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা জাগুর পাড়ার আরিজ মিয়ার ছেলে। পিতা হারা উন্দা স্ত্রী সন্তানের সুখের জন্য ১০ বছর ধরে মালেয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। গত ১৮ আগস্ট বুধবার সেখানকার স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায় উন্দা। প্রথমে মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ বললেও পরে করোনার কথা বলে পরিবার ও বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কিছু না জানিয়েই উন্দার লাশটি দাফন করে ফেলেছে কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ। লাশ বহনের খরচ ও পরিবারকে আর্থিক সহায়তা না দিতেই এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উন্দার পরিবারের লোকজনের। উন্দার একাধিক প্রবাসী সহপাঠি ও পারিবরিক সূত্র জানায়, উন্দারা পাঁচ ভাই। উন্দা চতুর্থ। পরিবারের সুখের কথা ভেবে আজ থেকে ১০ বছর আগে মালেয়েশিয়ায় পাড়ি জমায় উন্দা। সে দেশের ক্লাং সেলাংঘর অবস্থিত ওয়ার্ক লিংক এসডিএন বিএইচডি নামে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীতে কাজ করত সে। সম্প্রতি বিয়ে করেছে। রেমিটেন্স যোদ্ধার উন্দার রয়েছে সুমাইয়া আক্তার নামের দেড় বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান। মালয়েশিয়ায় এখন চলছে লকডাউন। গত ১৮ আগস্ট সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে উন্দা। কোম্পানীর দায়িত্বশীল লোকজন উন্দাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় উন্দা মারা যায়। মৃত্যুর সংবাদ শুনে সেখানে কর্মরত উন্দার বড় ভাই জিলু মিয়া, সহপাঠি ও আত্মীয়স্বজন মুঠোফোনে কোম্পানীর ম্যানেজমেন্টের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেন। কোম্পানীর লোকজন উন্দার মৃত্যুর কারণ এখনো জানতে পারেনি বলে জানায়। কারণ তারা হাসপাতাল থেকে সনদপত্র পাননি। দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে তারা জানায় উন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। গতকাল ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কোম্পানীর ম্যানেজমেন্টের লোকজনের দায়িত্বে উন্দার মরদেহ মালয়েশিয়াতেই দাফন করা হয়েছে। তবে উন্দার লাশ দাফনের বিষয়টি তার পরিবার ও বাংলাদেশ হাই কমিশনকে না জানানোর ফলে পরিবারের সদস্যদের মনে সন্দেহের তৈরী হয়েছে। একই কোম্পানিতে কাজ করেন উন্দার আপন বড় ভাই জিলু মিয়া। লাশ দাফনের বিষয়টি জিলু মিয়াকেও জানানো হয়নি। ওদিকে উন্দার মৃত্যুর খবরে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে গোটা সৈয়দটুলা গ্রামে। তরতাজা সন্তানকে হারিয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করছেন উন্দার মা। চিৎকার করে কাঁদছেন অল্প বয়সে স্বামী হারা উন্দার স্ত্রী। কিছুই বুঝতে পারছে না উন্দার একমাত্র কন্যাসন্তান সুমাইয়া। বড় বড় চোখ করে চারিদিকে তাকাচ্ছে। সুমাইয়া এখনো বুঝতে পারছে না চিরদিনের জন্য পিতা হারানোর বেদনা।