রাষ্টায়ত্ব ব্যাংক গুলোর গোডাউন সুপার ভাইজার, গোডাউন কিপার ও গোডাউন চৌকিদারদের নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির কারণে খুলনার কাঁচাপাট ব্যবসা আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার পুঁজি, পাটগুদাম মালিক হারিয়েছে লাখ লাখ টাকার পাটগুদাম। পাট ব্যবসায়ীরা ও পাটগুদাম সংশ্লিষ্ট স্টাফরা করেছে বাড়ি গাড়ি। যেন দেখার কেউ নেই। বর্তমানেও সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের টাকা লোপাটের ঘটনা। ব্যবসায়িরা করেছে বাড়ি গাড়ি ও শোপিংমলসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ঋণ ও গুদামের মালামাল শুধুই কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।এমনি মাত্র একটি ঘটনা এসেছে আইনের কাঠগোড়ায়। সোনালী ব্যাংক খুলনা করপোরেট শাখার ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রতারণা করে আত্মসাতের অভিযোগে স্টার সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সালাউদ্দিন, ব্যাংকের গোডাউন কিপার আঃ মান্নান হাওলাদারসহ তিন জনের নামে মামলা করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন খুলনা।দুদকের উপপরিচালক মোঃ শাওন মিয়ার করা এই মামলা গত সোমবার খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্টার সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ সোনালী ব্যাংক খুলনা করপোরেট শাখা থেকে প্লেজ ১৭কোটি এবং হাইপো দেড় কোটি টাকাসহ মোট ১৮কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ করে। এই ঋণের বিপরীতে জামানত ছিল গোডাউনে রক্ষিত রফতানিযোগ্য চিংড়ি মাছ। ব্যাংকের পক্ষ থেকে গোডাউন কিপার আঃ মান্নান হাওলাদার ও সাপোর্টিং স্টাফ আঃ রহিম বাবু গোডাউন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।
স্টার সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মোঃ সালাউদ্দিন ব্যাংকের গোডাউন কিপারের যোগসাজশে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট সময়কালে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করে দেন। গভীর রাতে গোডাউন খুলে চিংড়ি মাছ পাচার কালে ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম মোঃ আবু হোসেন শেখ (বর্তমান অবসরপ্রাপ্ত) পুলিশের সহায়তায় গোপনে মাছ বিক্রির প্রমাণ পান। তিনি নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এই ঘটনায় ব্যাংকের সিবিএ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ডিজিএমকে লাঞ্ছিত করেন এবং পুলিশের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে পুলিশ পক্ষপাতমুলক ভাবে এই মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। দুদকের এজাহারে উল্লেখ রয়েছে যে মোঃ আঃ রহিম বাবু ব্যাংকের সিবিএ নেতা হওয়ায় তখনকার ডিজিএমকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার হুমকি দেন। এমতাবস্থায় ডিজিএম সিবিএ নেতাদের চাপে কোনো ব্যবস্থা নিতে এবং তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, দুদক মামলায় এঝারভক্ত আসামি মোঃ আঃ রহিম বাবু শ্রমিকলীগ নেতা ও সোনালী ব্যাংক সিবিএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি বলে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অভিযোগ। অবসরে গেলেও নতুন নির্বাচন না হওয়ায় তিনি এখনো সিবিএ নেতা।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশন ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় স্টার সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি মোঃ সালাউদ্দিন, ব্যাংকের গোডাউন কিপার আঃ মান্নান হাওলাদার ও ব্যাংক স্টাফ আঃ রহিম বাবু সহ ৩ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করে। সোনালী ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখার বর্তমান ডিজিএম শেখ শহিদুল ইসলাম এ মামলার কথা স্বীকার করে জানান,গোডাউন কিপার আঃ মান্নান হাওলাদার সাময়িক বরখাস্ত আছেন। মামলার কপি পাওয়া গেলে অন্যান্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান স্টার সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অর্থ ঋণ আদালতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির মামলা দায়ের করা হয়েছে। খুলনার সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে ব্যাংকের টাকা লোপাটের আরো চাঞ্চল্যকর ঘটনা বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।