স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো দেশের সব জেলায় করোনা শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন জেলার মানুষ করোনা পজিটিভ হলেও ফলাফল আসতে দেরি হওয়ায় সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশের ৩৬টি জেলায় করোনা পরীক্ষার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পরিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার নেই। ওসব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনাও পিছিয়ে রয়েছে। ফলে করোনা পরীক্ষার জন্য র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং জিন এক্সপার্টের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। তার মধ্যে জিন এক্সপার্টের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা কম। আর র্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতির পরীক্ষা শতভাগ নির্ভুল না হওয়ায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নমুনাগুলো আরটি-পিসিআরে নিরীক্ষা করা হয়। জেলাগুলোতে আরটি-পিসিআর না থাকায় নমুনা বিভাগীয় শহর বা রাজধানীতে পাঠাতে হয়। তাতে নমুনা দেয়া ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা জানাতে বিলম্ব হয়। আর ওই সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৫৩টি জিন এক্সপার্ট, ৫৩৩টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও ১৩৩টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি আরটি-পিসিআরের সংখ্যা মাত্র ৫৫টি। তার মধ্যে বেশির ভাগ পরীক্ষাগারই রাজধানী ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত। ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার মধ্যে মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার নেই। চট্টগ্রামের ১১ জেলার মধ্যে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর; ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার মধ্যে নেত্রকোনা ও শেরপুর; রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও জয়পুরহাট; রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধা; খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর ও নড়াইল; সিলেটের ৪ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার; বরিশালের ৬ জেলার মধ্যে পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলায় সরকারি আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার নেই। আর আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার না থাকায় ওসব জেলার বাসিন্দাদের করোনা শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা বিভাগীয় শহর এবং রাজধানীতে পাঠানো হয়। ফলে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, একটি জিন এক্সপার্ট মেশিনে একবারে ৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। কিছু মেশিনে ৮টি বা ১৬টি নমুনাও পরীক্ষা করা যায়। তবে আরটি-পিসিআর মেশিনে একবারে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দিনে দু-তিন পর্যায়ে (শিফটে) নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে ওই পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর মেশিন, বায়োসেপটিক পরীক্ষাগার এবং দক্ষ জনবল প্রয়োজন হয়। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সব জেলায় আরটি-পিসিআর মেশিন স্থাপনের কথা বলেছিল। আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কথাও বলা হয়। গত বছরের শেষে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করা হলেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপনের বিষয়টি এখনো প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পায়নি। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ প্রায় দেড় বছর হলো দেশ করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে। অথচ এখনো সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার নেই। সব জেলায় ওই পরীক্ষাগার না থাকার কারণে করোনা নমুনা পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, এখনই আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জিন এক্সপার্ট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর যে পদ্ধতিতেই পরীক্ষা করা হোক না কেন, দক্ষ লোকবলের সঙ্কট রয়েছে।