কেঁচো সার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের তানিয়া পারভীন। তানিয়ার উৎপাদিত সারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তার উৎপাদিত সারের গুনগত মান ভালো হওয়ায়, স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পুরন করে, এখন দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করছে। জেলার বাইরে সার যাচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় সার যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রতি মাসে উৎপাদন করছেন ৩ থেকে ৪টন সার। সার বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সার উৎপাদন করে তানিয়া হয়েছেন স্বাবলম্বী। তার খামারে কাজ করে তিন জন নারীও ভালো আছেন। তানিয়া একাই স্বাবলম্বী হননি, অনেক নারীকেও করেছেন স্বাবলম্বী। তার সাফল্য দেখে অন্য নারীরাও তানিয়ার থেকে পরমর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছেন কেঁচো সারের খামার। তারাও এখন তানিয়ার মতো সার উৎপাদন করছেন এবং বিক্রয় করে স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছেন। তানিয়া পারভীন ফরিদপুর পৌরসভার শোভাররামপুর মহল্লার বাসিন্দা।
তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার শুধু ফরিদপুর জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। দশের বিভন্ন জেলার চাষিরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও সার নিচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৭সালে ৩টি রিং স্লাব দিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন রিং স্লাবে সিমাবদ্ধ নেই এই উদ্যোগতা। বাড়ির আঙ্গিনায় বিশাল টিনের সেড় ও আরেক পাশে ছাপড়া বানিয়ে তৈরি করেছেন ২৬টি হাউজ (চৌবাচ্চা)। প্রতিটি হাউজ ৪ ফুট বাই ১০ ফুট আকারের।
¬¬¬
প্রতিটি হাউজে ৪০মন গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১০কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরী হয় কেঁচো সার। এই ভাবে প্রতি মাসে ২৬টি হাউজ থেকে তিন থেকে চার টন সার উৎপাদন করে থাকেন এই নারী উদ্যোগতা। উৎপাদিত সারের গুনগত মান ভালো হওয়ায়, স্থানীয় চাষিরা রাসয়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে শুরু করেন তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোগক্তা বক্তার খান বলেন, রাসায়নিক সারের কুফল আছে যেমন, তেমনি ফসলের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পায়। তেমনি জমির প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট, মাটির স্বাবাবিক পরিবেশ নষ্ট করে। আর কেঁচো সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, কম খরচে অদিক ফলন হয়। ফলে আমরা তানিয়া পারভীনের কেঁচ সার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছি।
ঢাকার শেওড়া পাড়ার জোহরা খানম তার বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফুল, ফল ও সবজির বাগান। তানিয়া পারভীনের কেঁচো সারের কথা যানতে পেরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সার নিয়ে নিজের বাগানে ব্যবহার করেছেন। জোহরা বেগম বলেন, আগে আমি ঢাকা থেকে ৫০টাকা কেজি সার কিনে বাগানে ব্যবহার করেছি। পরে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি ফরিদপুরের তানিয়া পারভীনের কেঁচো সারের কথা। তানিয়ার থেকে সারা এনে বাগানে ব্যবহার করছি। সারের গুনগত মান অনেক ভালো, দামেও কম ১৫টাকা কেজি। অমি এখন নিয়মিত তানিয়া পারভীনের সার আমার বাগানে ব্যবহার করবো। আমি নিজেও তানিয়া পারভীনের সারের খামার দেখতে যাবো। আমি একন তেকে তানিয়া পারভীনের কেঁচো সার ব্যবহার করবো।
তানিয়া পারভীন প্রতি কেজি সার খুচরা ২০ টাকা ও পাইকারি ১৫টাকা বিক্রয় করছেন। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫হাজার টাকা। কেঁচো সার দিয়ে শুধু তানিয়া পারভীনই নয়, তানিয়ার সাফল্য দেখে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আবেদা বেগম, নুরজাহান, তানিয়া শিকদারসহ অনেকেই। অনেকে নতুন করে কেঁচো সার তৈরীর কথা ভাবছেন।
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তানিয়া বেগমের কেঁচো সার নিয়েছে হবিগঞ্জের দেবাশীষ রয়। দেবাশীষ রয় একজন সৌখিন বাগানী। তিনি বলেন, আমি একজন সৌখিন বাগানী। আমি সবসময় বিদেশী ফল, সবজি ও ফুলের চাষ করে থাকি। আমি হলুদ তরমুজ, ব্রকলি, বিটসহ বিভিন্ন প্রকার বিদেশী ফুল ফলের চাষ করে থাকি। আর আমি আমার বাগানে সবসময় জৈব সার ব্যবহার করে থাকি। বাগান করতে গিয়ে আমার প্রচুর জৈব সার দরকার হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সার এনে আমার বাগানে ব্যবহার করছি। সারের গুনগত মান ভালো আছে।
উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রথমে স্বল্পপরিসরে শুরু করি কেচোর সার উৎপাদন। প্রথমত নিজের জমিতে প্রয়োগ শুরু করে সফলতা পাই। এরপর এলাকার চাষিদের মাঝে সার সরবরাহ করতে থাকি। এলাকার চাষিরা সার ব্যবহার করে অধিক ফলন ও কম খরচে ফসল ও সবজি উৎপাদন করতে পেরে তারাও খুশি। এরইমধ্যে সারারের চাহিদা বাড়তে থাকায়। বড় পরিসওে শুরু করেছি। আগে একাই সব কাজ করতাম। এখন আমার খামারে নিয়মিত ৩জন নারী কাজ করে ভালো আছে। অনেক নারী আর থেকে সহযোগিতা নিয়ে সার উৎপাদন শুরু করেছে। আমার সারা এখন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করে, দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের চাহিদা পুরন করছে। আমি এখন সার দিয়ে সারতে পারি না। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশী। সরকারী সহযোগিতা পেলে আমি আরো বড় পরিসরে সার উৎপাদন করতে পারবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হজরত আলী বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে অনেকেই সার তৈরী করছে। কেঁচো সার উৎপাদন করে অনেকেই সাবলম্বী হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতমো তানিয়া পারভীন। তানিয়ার সার স্থানীয় চাহিতা পুরন করে এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। ফরিদপুর প্রায় শতাধিক নারী এই সার তৈরী করছেন। পরিবেশবান্ধব এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।