মূল পর্চাকে কম্পিউটারের মাধ্যমে এডিট করে জমির পরিমান বেশি দেখিয়ে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিরোধীয় জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি বিষয়টি এলাকায় চাউর হওয়ায় জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ২৭ জুন জেলার গৌরনদী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়। বিরোধীয় জমি ভূয়া পর্চায় দলিল সম্পাদন হওয়ায় গৌরনদী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও দলিল লেখকের পেশাদারিত্ব নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার মোবাশ্বেরা সিদ্দিকা বলেন, আমার কাছে যে কাগজ সাবমিট করা হয়েছে সেই কাগজ অনুযায়ী দলিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার কোন দায়বদ্ধতা নেই। তারপরেও বিষয়টি জানার পর দলিল লেখকের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। তবে দলিল লেখক মজনু তালুকদার উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার কর্তৃক তার লাইসেন্স স্থগিতের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, দলিল দাতা ও গ্রহীতা যে কাগজ জমা দিয়েছেন সে অনুযায়ী তিনি দলিলটি লিখেছেন। জাল জালিয়াতির বিষয়টি আমার জানা নেই।
অপরদিকে পৌরসভার দক্ষিণ বিজয়পুর এলাকার বাসিন্দা আছিয়া বেগম জাল জালিয়াতি চক্রকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবীতে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ, দলিলের নকলসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আশোকাঠী গ্রামের বাসিন্দা ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা আবদুস সালাম বাবুলের স্ত্রী হিরন নাহার চলতি বছরের ২৭ জুন গৌরনদী সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে একটি দলিল সম্পাদন করেন (যার নং ২১৫১/২১)। দলিল দাতা একই উপজেলার দক্ষিণ পালরদী গ্রামের কেশব চক্রবর্তীর দুইপুত্র সুভাষ চক্রবর্তী, বিজয় চক্রবর্তী এবং ঋষিকেশ চক্রবর্তীর পুত্র গৌরঙ্গ চক্রবর্তী ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।
সূত্রমতে, দক্ষিণ পালরদী মৌজার ৩৮৭ নং খতিয়ানের ২৬৫ নং দাগের বিএস মূল পর্চায় চারজন দলিল দাতার নামে ০.১৪৬ শতক জমি থাকলেও কম্পিউটারের মাধ্যমে মূল পর্চাকে এডিট করে ভূয়া পর্চা বানিয়ে বেশি জমি দেখিয়ে দলিল গ্রহিতা হিরন নাহারের নামে ছয় শতক জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়।
দক্ষিণ পালরদী গ্রামের আবদুর রব মিয়ার পুত্র মেহেদী মিয়া জানান, বিক্রিত জমি নিয়ে আদালতে দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। এমনকি বিরোধীয় জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে আদালত। এরপরেও দলিল গ্রহিতা ও দলিল দাতাগণ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমি রেজিষ্ট্রি করিয়েছে।
এ ব্যাপারে দলিল দাতা গৌরঙ্গ চক্রবর্তী বলেন, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরের ভাই নুরুল ইসলাম বেপারীসহ একটি মহল তাদের সাথে প্রতারনা করে দলিলটি করে দিয়েছেন। জাল জালিয়াতির সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
দলিল গ্রহিতা হিরন নাহারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি (হিরন নাহার) প্রবাসে থাকায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর লিটন বেপারীর ভাই নুরুল ইসলাম বেপারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কে বা কারা জমি বিক্রি কিংবা ক্রয় করেছেন সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।