ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ নদীতে বাঁধ দিয়ে দেশীয় মাছ স্বীকার করছে এক ধরনের অসাধু মানুষ। তারা মাছের বিচরণ ক্ষেত্র বন্ধ করে এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে বিক্রি করছে। ফলে দেশীয় এসব মাছের অভয়ারণ্য ও বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে। ইকড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতে গিয়ে দেখা যায় মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বাধ। এই বাধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট-বড় সব মাছই ধরা পড়ায় ভবিষ্যতে নদ নদীতে দেশীয় মাছের সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় জেলেদের। গান্না এলাকার কিছু মানুষ নদীতে এভাবে প্রতিবছর বাধদিয়ে মাছ ধরে। এভাবে তারা দুই থেকে তিন মাস মাছ ধরে থাকে। সে মাছ বিক্রি করেই টাকা রোজগার করে জিবিকা নির্বাহ করে। তবে দেশীয় মাছের বংস বিস্তার ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ না ধরার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইনের কথা তারা কেউ জানেন না।
ঝিনাইদহ জেলায় ভারতীয় নদ-নদী রয়েছে ১২টি। ৩৫টি বাওড় ও ১০৪ বিল রয়েছে। খাল রয়েছে ৪৩টি এবং পুকুর রয়েছে ২৭ হাজার ৬৪৯টি। এক হাজার ৯৪৯ বর্গ কিলোমিটার আয়াতনের এ জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। এই পরিমাণ মানুষের বাৎসরিক মাছের চাহিদা ৩৮ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে চাহিদার থেকে বেশি মাছ উৎপাদন হলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন ব্যহত হয়। মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই স্বীকারিরা ধরে ফেলা ও সময় মত বৃষ্টি না হওয়াসহ নানা কারণে দেশীয় মাছ উৎপাদন একেবারে নি¤œ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান জেলার মৎস অফিস।
কালীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদী মস্তবাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপুল সরকার জানান, আমাদের গ্রামের কয়েকজন মানুষ নদীর মধ্যে বাঁশের বেড়া আর জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করছে। তাদের দাপটে আমরা খাওয়ার জন্য মাছও ধরতে পারিনা। এভাবে নদীর মাছ ধরা পড়লে কোনো মাছ বংশ বিস্তার করতে পারবে না।বিশেষ করে চিত্রা নদীতে অবৈধ বাঁশের বাঁধ, দোয়াড়, ভেসাল জাল ইত্যাদি ব্যবহার করে মাছ ধরার মহোৎসব। এতে করে যেমন নদীর নব্যতা হারাচ্ছে তেমনি বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়ার কারণে মাটির পলি এবং অন্যান্য পরিপোষক পদার্থ বিভিন্ন কাঠামোতে আটকে যাওয়ায় নদীর পানিতে মিশে ছড়িয়ে যেতে পারছে না। ফলে পলি জমে নব্যতা হারায় তেমনি ¯্রােত বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। অপর দিকে কিছু প্রজাতির মাছ প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট স্থান খুঁজে থাকে, বাঁধের কারণে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না; সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এ ছাড়া ও কারেন্ট জাল ব্যবহারের ফলে ছোট চারা মাছ ধরাপড়ার কারণে বিলুপ্ত হতে বসেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, নদীতে আড়িভাবে বাঁশের বাঁধ ও জাল দিয়ে মাছ ধরা বেআইনি। এ বাধের কারণে মাছ বড় হাওয়ার সুযোগ পায় না। সব ধরনের ছোট ছোট মাছ ধরা পড়ে। যে সব মাছ খাওয়ার উপযোগী নয় কিন্তু নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন নদ নদীতে যে সকল বাঁধ দেওয়া আছে তা অপসারণ শুরু করেছি। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে নদী থেকে সব বাঁধ অপসারণ করতে পারবো।