শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দী উপজেলা গুলিতে তিনটিতেই উঁচু নিচু পাহাড় রয়েছে। পাহাড় গুলিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মধু চাষ। শিক্ষিত বেকাররা যুবক ও ব্যাক্তিগন সারা বছর ওইসব পাহাড়ী এলাকায় এলাকায় মৌ মাছি হতে মধু উৎপাদন করছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থানের পথ।
বন বিভাগ ও মৌ চাষী সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বন বিভাগ ও পাহাড়ে থাকা ব্যাক্তিগন নানা ধরণের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ রোপন করেছে। ফলে সারা বছরই পাহাড়ে অনেক বৃক্ষরাজি ফুলে ফলে ছেয়ে থাকে। এছাড়াও ভারতের সীমানা দিয়েও রয়েছে অনেক ফুল ও ফলের বাগান। শিক্ষিত বেকার যুবকরা এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাক্সে মৌ চাষের মাধ্যমে মধু আহরণ শুরু করেছে। অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন মধু চাষে আগ্রহীর সংখ্যাও বাড়ছে। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের নতুন পথ। এদিকে নালিতাবাড়ী সীমান্তের পাহাড় গুলিতে ক্ষুদ্র পরিসরে বনের ভিতরে প্রকৃতিগত ভাবে গাছে থাকা মৌ চাক হতে মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করছে কিন্তু বেশি পরিসরে শ্রীবর্দী ও ঝিনাইগাতীর পাহাড়ী এলাকায় এটি বানিজ্যিক ভাবে মৌ চাষিরা মধু চাষ শুর করেছে বলে জানা যায়।
ঝিনাইগাতীর পানবড় গ্রামের যুবক কানরাম চন্দ্র কোচ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন আমি বেকার ছিলাম। বেশ কয়েক বছর আগে একটি এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি মৌ চাষ। পাহাড়ি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে সারি সারি করে বসাই মৌমাছির বাক্স। আমরা যে মধু সংগ্রহ করছি তা বন ফুলের মধু। এই মধু অনেক সুস্বাদু। এ কারণে এর চাহিদাটাও অনেক বেশী। স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি শেষে এই মধু এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিমণ মধু ২২ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০ বছর আগে মধুর ব্যবসা করতেন একই গ্রামের আকমল মিয়া।
ষাটোর্ধ্ব খামার শ্রমিক হায়দার আলী বলেন, বাড়ির পাশের খামারে কাজ পেয়েছি। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা বেতন পেয়ে ভালো আছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ক্যাপ ছাড়া মধু তাপের সাহায্যে পিউরিফাই করতে হয়। মৌমাছি সারা দিন মধু সংগ্রহ করার পর রাতে ওই মধুতে তার পাখা প্রতি সেকেন্ডে ২০০ বার করে নাড়ায়। এভাবে ১২-১৪ দিন পর মধু পারফেক্ট হয়। এরপর মধু ক্যাপ করে সংরক্ষণ করা হয়। এর সুবিধা হলো এ মধুতে সহজে ফাঙ্গাস ও দুর্গন্ধ হবে না। তাই ক্যাপকৃত মধুর বাজারমূল্য বেশী। গারো পাহাড়ে উৎপাদিত মধুর প্রায় পুরোটাই ক্যাপকৃত আর এর গুণগত মানও অতুলনীয়।
মৌ চাষীরা বলছেন, এর মাধ্যমে যেমন কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে গেছে অন্যদিকে স্বাদে অনন্য পাহাড়ি ফুলের খাঁটি মধু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আরও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছে বন বিভাগ।
নালিতাবাড়ীর মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের ফুল জন্মে আর সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই বন মধু চাষের উপযুক্ত স্থান। এখানে কেউ মৌচাষ করে মধু উৎপাদন করতে চাইলে বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারে। এর মাধ্যমে আরও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।