মাচায় মাচায় রঙিন তরমুজ। সেই মাচায় বসে দোয়েল দেয় শিস। রঙিন তরমুজ দেখে আর দোয়েলের শিস শুনে আনন্দে নেচে ওঠে কৃষক আসাদুজ্জামানের মন। স্বপ্ন বুনতে থাকে নিবিড় মনে। রঙিন তরমুজ এবার সংসারে আনবে সুদিন। দু:খ ঘুচবে তার। হাসি ফুটবে পরিবারের সবার মুখে। এমনই স্বপ্ন নিয়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের নগরঘাটার মৃত বদিয়ার রহমানের পুত্র কৃষক আসাদুজ্জামান সরদার আসাদ (৪৫) জানান, তিনি এবার ২০ শতক জমিতে নতুন চাষ করছেন ব্ল্যাক বেবি ও হলুদ রঙের তরমুজ। তার জমিতে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩ হাজার তরমুজ রয়েছে। যা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে। বর্তমানে গাছের পরিচর্যায় বেশিরভাগ সময় দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফলন ভালো হয়েছে, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। আর তরমুজ খেতেও রসালো ও সুস্বাদু। ভালো দামে বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
শুধু আসাদুজ্জামান নন, তার মতো রঙিন তরমুজ চাষ করে সুখের স্বপ্ন দেখছেন মাসুদ হোসেন, শফিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম এবং একই এলাকার মিঠাবাড়ি গ্রামের মুকুল হোসেন। তারাও এ বছর রঙিন তরমুজ চাষ করেছেন। পার্শ¦বর্তী ধানদিয়া ইউনিয়নের সেনেরগাঁতি গ্রামেও এ তরমুজ চাষ হয়েছে।
এসব কৃষকের মাচায় মাচায় ঝুলছে ব্ল্যাকবেবি, মধুমালা এবং ইয়োলো বার্ড জাতের রঙিন তরমুজ। আর এসব রঙিন তরমুজকে ঘিরে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন নগরঘাটা এবং সেনেরগাঁতি গ্রামের কৃষকেরা।
জানা গেছে, তালা উপজেলায় এ বছর মোট ২ হেক্টর জমিতে রঙিন তরমুজ চাষ হয়েছে। শুধু শীতকাল বাদে বাকি সব ঋতুতে চাষ করা যায় এ রঙিন জাতের তরমুজ।
চাষিরা জানান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় তালার বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন চেষ্টা’র কৃষি ইউনিটের আওতায় কৃষকদের এ চাষের ব্যাপারে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
সরোজমিনে দেখা যায়, নগরঘাটা ও সেনেরগাঁতি এলাকায় সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে রঙির তরমুজ। ছোট-বড় তরমুজে নুয়ে পড়েছে মাচা। দেখতে যেন হলুদের সমারোহ। এ উপজেলায় প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে বলে জানা যায়। পোকা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। তাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি। এ তরমুজ চাষ দেখতে ভিড় করছেন এলাকাবাসি।
উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মো: নয়ন হোসেন জানান, আমরা গত ২ বছর যাবৎ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করছি। তবে এ বছরই নতুন এই গ্রীষ্মকালীন রঙিন তরমুজ চাষ তালার নগরঘাটা এবং ধানদিয়ায় করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এ এলাকার ৬ বিঘা জমিতে রঙিন তরমুজ চাষ হচ্ছে। প্রথমে শুরু হয়েছে সেনেরগাঁতিতে। তিনি আরও বলেন বিঘা প্রতি খরচ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি বিক্রি হবে। তবে বাজার ভালো গেলে ১.৫ লক্ষ টাকাও বিঘা প্রতি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা হলেও কিছুদিন পূর্বে সেনেরগাঁতির কৃষকেরা বাজারের সর্বোচ্চ দাম পেয়েছেন। তারা প্রতি কেজি তরমুজ সর্বোচ্চ ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, চাষি আসাদুজ্জামান সরদার আসাদ নগরঘাটায় প্রথম হলুদ রঙের তরমুজ আবাদ শুরু করেন। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার তরমুজ চাষ দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারাও আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন, আমি পরামর্শ দিচ্ছি।
রঙিন তরমুজ চাষের ব্যাপারে তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, উপজেলায় মোট ২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ রঙিন চাষাবাদ হচ্ছে। তালা উপজেলার বে-সরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র মাধ্যমে উপজেলায় রঙিন তরমুজ চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।