গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার জট খুলতে শুরু করেছে। অবশেষে আলোচিত এই হত্যা কান্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পিবিআই। ইদ্রিস হত্যায় জড়িত থাকায় দুখু মিয়া ওরফে সুমন নামে একজন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর।
২৫ আগস্ট বুধবার ভোর রাতে দুখু মিয়াকে (২২) ঘটনাস্থল টোক এলাকার বাইপাস নামক স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। গ্রেফতারকৃত দুখু মিয়া ওরফে সুমন উপজেলার শহরটোক এলাকার লিটন মিয়ার পুত্র।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট ইদ্রিস হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত ইদ্রিসের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে কাপাসিয়া থানা পুলিশ মামলাটি ৪ মাস তদন্ত করে কোন ক্লো বের করতে না পারায় পরবর্তীতে তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের গাজীপুর শাখায় পাঠানো হয়।
দায়ের করা মামলার ১ নং আসামি জহির আহসান জাহিদের নানার বাড়ির পাশে পুকুরের পাড়ে ইদ্রিসের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন মরদেহের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত দেখা যায়। নিহত ইদ্রিস উপজেলার সালয়াটেকি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে।
মামলাটি হাতে নিয়ে পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের দিক নির্দেশনায় ও গাজীপুর পিবিআইয়ের এসপি মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানান, এজাহারনামীয় ১নং আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর সাথে তার নানার বাড়ির সম্পত্তির ওয়ারিশ নিয়ে তার মামা রবিন ভূঁইয়ার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। নিহত ইদ্রিস আসামি জাহিদের পক্ষ নিয়ে তাকে জমি দখলে সহযোগীতা করেন। পরবর্তীতে আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর সাথে ইদ্রিস এর মনোমালিন্য হলে ইদ্রিস আলী আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর মামা রবিন ভুঁইয়ার সাথে যোগ দেয়। ঘটনার ০৩ (তিন) দিন আগে ঘটনাস্থলের পাশে এজাহারে উল্লিখিত আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ভিকটিম ইদ্রিসকে ভয় দেখায়।
এ সুযোগে এজাহারে উল্লিখিত আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর মামা রবিন ভূঁইয়া গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ দুখু মিয়া ওরফে সুমন ও তার সহযোগীদের সাথে ইদ্রিসকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ১২ লক্ষ টাকায় হত্যার চুক্তি করে।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট রাত ২টার দিকে আসামিরা ইদ্রিসকে ইয়াবা ট্যাবলেট আনার জন্য মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলে ডেকে এনে গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে ও এলোপাথারিভাবে মারপিট করে হত্যা করে। পরে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ এর নানা বাড়ির যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ওই ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এজাহারে উল্লিখিত জহির আহসান জাহিদ তার মায়ের ওয়ারিশ প্রাপ্ত সম্পত্তি নেয়ার জন্য তার মামা রবিন ভূঁইয়াকে বললে তার মামা রাজি না হওয়ায় সে স্থানীয় রফিক এবং রফিকের ভাগিনা ভিকটিম ইদ্রিস আলীর সহযোগীতা নেয়। এই সুযোগে ভিকটিম ইদ্রিস আলী জাহিদের দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জাহিদের কথা বলে তার অগোচরে টাকা নেয়। এই বিষয়টি জাহিদ বুঝতে পারায় ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিকের সাথে তার বিরোধ হয়।
তিনি বলেন, ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক পুনরায় এজাহার নামীয় আসামি জাহিদের মামা রবিন ভূঁইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে। পরবর্তীতে রবিন ভূঁইয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি তার ভাগ্নে এজাহারনামীয় আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ কে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ দুখু মিয়া ওরফে সুমনসহ তার সহযোগী আসামীদের দিয়ে ভিকটিম ইদ্রিসকে হত্যা করে মৃত দেহ রবিন ভুঁইয়ার নিজের বাড়ির যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ওই ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, বুধবার (২৫ আগস্ট) আসামি দুখু মিয়া ওরফে সুমনকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে হত্যাকা-ে জড়িত অন্যান্যের নাম জানিয়েছে এবং নিজের জড়িত থাকার ঘটনা উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।