গুচ্ছগ্রামে বাসস্থানের সুযোগ পেয়ে শেরপুরের হিজড়ারা (তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠি) ভিক্ষাবৃত্তি, চাঁদাবাজি ছেড়ে আয়বর্ধনমুলক কর্মকান্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। গুচ্ছগ্রামের অধিবাসী হিজড়ারা কেউ হাঁস-মুরগী লালন পালন করছেন, কেউ চা-পানের দোকান দিয়েছেন, কেউবা আবার কাপড় সেলাইয়ের কাজ করছেন। কেউ কেউ গুচ্ছগ্রামের পুকুরে মাছের চাষ, খোলা জমিতে সব্জীচাষ, পশুপালন করার চিন্তাভাবনা করছেন।এভাবেই নিজেদেরকে আয়বর্ধন মুলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করনের মাধ্যমে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছেন শেরপুর সদরের আন্ধারিয়া সুতিরপার তৃতীয়লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। পরিবারে ঠাঁই না পাওয়া এসব হিজড়ারা সরকারের দেওয়া গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় পেয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন বুনছেন।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে আন্ধারিয়া সুতিরপার তৃতীয়লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রামে পরিদর্শনকালে তাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া যায়। সেখানে বর্তমানে ৩৪ জন হিজড়া বসবাস করছেন। আরো কয়েকজন এই গুচ্ছগ্রামে উঠার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানালেন শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার ও সাধারন সম্পাদক মুর্শেদা। এইদিন গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারি হিজড়াদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন। তার সাথে ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, জনউদ্যোগ কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্য সচিব হাকিম বাবুল। তাদেরকে গুচ্ছগ্রামে স্বাগত জানান কামারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বারী চাঁন। এ সময় গুচ্ছগ্রামের পুরো এলাকাটি তারা পরিদর্শন করেন এবং কী কী সমস্যা রয়েছে, কারা কী করছেন, কীভাবে জীবন চালাচ্ছেন, সে সম্পর্কে তারা হিজড়াদের নিকট জানতে চাঁন। গুচ্ছগ্রামের মাল্টিপারপাস কক্ষের সামনে হিজড়াদের অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হিজড়ারা নিজেদের জীবন সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
হিজড়ারা গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলোর ভিটি পাকা করা, বৃষ্টি হলে ঘরের সামনে পানি জমে যাওয়া সহ বিভিন্ন সমস্যার কথাও জানান। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল-মামুন গুচ্ছগ্রামে নিজ নিজ বসতঘরে বসবাস করতে থাকায় এবং আত্মকর্মে নিয়োজিত হওয়ায় তাদেরকে অভিনন্দন জানান।
তিনি তাদেরকে জানান, যারা এই গুচ্ছগ্রামে বসবাস করবে তাদের আত্মকর্মসংস্থান ও জীবনমান উন্নয়ন প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। পরে ৩৪ জন হিজড়ার মাঝে জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ এবং কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বারী চাঁনের পক্ষ থেকে সবার জন্য খাদ্যসামগ্রী উপহার প্রদান করা হয়। এসব খাদ্য সহায়তায় সেখানে বসবাসকারী হিজড়ারা অনায়াসে দুই মাস খেতে পারবেন।
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর খাসজমির ওপর ওপর ৪০ জন হিজড়ার বসবাসের জন্য নির্মিত হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রাম। ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে নির্মিত প্রতিটি ঘরের সাথেই রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা। গত ৭ জুন এই গুচ্ছগ্রামে হিজড়াদের পূণর্বাসনের জন্য মাঝে জমি সহ ঘর হস্তান্তর করা হয়।