ওয়ারিশ সনদ পেতে দেরি হওয়ায় সীতাকু-ের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কাবিনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছিল এক তালাকপ্রাপ্ত এক নারী। ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে এই অভিযোগ করেন ওই নারী।
গতকাল বোরবার দুপুরে অভিযোগের শুনানীকালে একথা বলেন ওই নারী বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ওয়ারিশ সদন যথা সময়ে না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এই অভিযোগ করেন তিনি। শুনানীকালে ওই নারী সাবেক স্বামী ও অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ওই নারীর সাবেক সাবেক স্বামী সেলিম বলেন, সালিশী বৈঠকে দেনমোহরের সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। দেড় লাখ টাকা নেওয়ার পর সে বিচার না মানার কারণে অবশিষ্ট টাকা দেওয়া হয়নি। ফলে টাকা আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকু-ের মধ্যম ঘোড়ামারা এলাকার ডলি আক্তারের সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদের বিরুদ্ধে ২২ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, চেয়ারম্যান দেন মোহরের দুই লাখ টাকা অর্থ আত্মসাৎসহ তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং ওয়ারিশ সনদ দেয়নি।
রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাৎ হোসেন নিজ দপ্তরে অভিযোগের শুনানী করেন।
শুনানীকালে ওই নারী বলেন, ওয়ারিশ সনদ দিতে দেরি করায় এবং অসৌজন্যমূলক আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছে সে। এ সময় তার সাবেক স্বামী সেলিম উদ্দিন বলেন, দেন মোহরের সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে তালাক কার্যকর হয়। প্রথম কিন্তির দেড় লাখ নিয়ে ওই নারী আর টাকা না নিয়ে কোর্টে মামলা করেন। ফলে অবশিষ্ট দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমি দুই লাখ টাকা না দিলে চেয়ারম্যান কোথাই থেকে দেবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসা সাহাদাৎ হোসেন বলেন, তালাকপ্রাপ্ত নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাচাই শেষে ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার জন্য বলেন। এ ছাড়া দেনমোহরের মামলা উচ্চ আদালতে চলমান বিধায় বিষয়টি ওখানে ফয়সালা হবে।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের শুনানীকালে অভিযোগকারী নারী ডলি আক্তার, তার সাবেক স্বামী সেলিম ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালে ডলি আক্তারের সাথে বিয়ে হয় কুমিরা এলাকার সেলিম উদ্দিনের সাথে। ২০১৭ সালে পারিবারিক কলহের কারণে সেলিম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ডলি। ওই মামলায় সেলিম জেলও খাটেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদে তাদের তালাক কার্যকর করার জন্য এলে সাত লাখ টাকা দেনমোহরের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রদানে সালিশী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথম কিস্তির দেড় লাখ নেওয়ার পর ওই নারী সালিশী বৈঠক না মেনে উচ্চ আদালতে আবারও মামলা করেন। এরইমধ্যে দেনমোহরের অবশিষ্ট দুই লাখ টাকা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ দেন ওই নারী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এতে সকল পক্ষ উপস্থিত ছিলো। অভিযোগকারীও প্রমান করতে পারেনি। এ ছাড়া সেলিম নামে সাবেক ওই নারীর স্বামী দুই লাখ টাকা দেয়নি বলে জানিয়েছেন। সেলিম যদি টাকা না দেয় তাহলে চেয়ারম্যান কোথায় থেকে টাকা এনে দেবে।
চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি কাল্পনিক। একটি পক্ষ চার বছর আগের মিমাংশিত একটি সালিশকে সামনে এনে আগামী ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ওই নারীকে ব্যবহার করছে। টাকার আত্মসাতের অভিযোগ যে মিথ্যা তা সবার সামনে প্রমানিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া যারা বিভিন্নভাবে সম্মাণহানী করেছে তাদের বিরুদ্ধেও আইননানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগকারী ডলি আক্তার শুনানীকালে বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের অনেক হয়রাণী করেছে। আমাদের ওয়ারিশ সনদ আটকিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান আছে বলেও জানান তিনি।