সাঁকোটি দুলছে। জান (প্রাণ) কাঁপছে। শুকিয়ে গেছে কাঁচা বাঁশ। ছিঁড়ে গেছে বাঁধন। পেরেকে ধরেছে জং। সাঁকোর উপর উঠলে গা ছমছম করে। সাঁকোর বাঁশ নুইয়ে পড়েছে পানিতে। কখন যে সাঁকোর বাঁশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে সেই শঙ্কায় বুক ধড়ফড় করে। এমনই শঙ্কায় খাল পারাপার হচ্ছিলেন গ্রামবাসি। কিন্তু ২২ আগস্ট সেই সাঁকোটি ভেঙে গেলেও আশা আছে মনে, একদিন এখানে হবে ইট-পাথরের ব্রিজ ! এভাবেই দুর্ভোগ ও আশার কথা জানান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের মানুষ।
স্থানীয় গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবিতা বালা মন্ডল জানান, আশাশুনি উপজেলার গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটা বাঁশের সাকোটি ২২ আগস্ট ভেঙে গেছে। এতে করে গজুয়াকাটি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এক প্রান্তে পাঁচপোতা গ্রাম অপর প্রান্তে গাজুয়াকাটি গ্রাম। শুধু এ দুই গ্রামের মানুষ নয়, স্থানীয় বড়দল ইউনিয়ন ও খাজরা ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সাঁকোটি। এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অন্তত ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পার হতে হয় সাঁকোটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তিনটি হলো-গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইনতলা হাইস্কুল এবং ত্রয়োদশ পল্লী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিনিয়ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাঁকো পারাপারে নাকানি-চুবানি খেতে হয়।
একই কথা বলেন, বাইনতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাখ মন্ডল। তিনি বলেন, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র বড়দল হাট। এই হাটে খুলনার কপিলমুনি, পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসেন। সাঁকোর ওপার থেকে যারা বড়দলে আসেন তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়া বাইনতলা বাজারে যাতায়াত করতে গেলেও পার হতে হয় সাঁকোটি। এলাকার শতশত শিক্ষার্থীকে সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় স্কুল-কলেজে। শিক্ষার্থীরা যখন কাঁধে সাইকেল আর পিঠে ব্যাগ নিয়ে সাঁকোটি পার হয় তখন সেই দুর্ভোগের দৃশ্য দেখা যায়না। এ ছাড়া ছেলে ও মেয়ে যখন একসাথে পারাপার হয় তখন আরেক দুর্ভোগ পোহায় তারা। সবমিলিয়ে সাঁকো নয়, সেতুর প্রয়োজন। তিনি জনস্বার্থে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ত্রয়োদশ পল্লী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত গাইন বলেন, সাঁকোটি বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু ২২ আগস্ট সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারছে না। শুধু এই দুই গ্রামের লোক নয়, পার্শ্ববতী ফটিকখালী গ্রামের লোকজনও এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চেেল আমন ধান রোপনের মৌসুম চলছে। কিন্তু এই সকল জমি রোপনের জন্য মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যমটি ভেঙে পড়েছে। ফলে তিন গ্রামের অন্তত ৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব বৈদ্য বলেন, একটি সেতুর জন্য আশাশুনি উপজেলার দুই ইউনিয়নের মানুষ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকার এত উন্নয়নমূলক কাজ করছে অথচ গজুয়াকাটি গ্রামটি রয়ে গেছে অবহেলায়-অনাদরে। এখানে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্ষা মৌসুমে এখনো পর্যন্ত আমাদের কাঁদামাটি মেখে রাস্তায় চলতে হয়। কোন রাস্তায় ইটের সোলিং পর্যন্তও নেই। সব মিলিয়ে আমাদের অনেক দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হয়। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তিনি এলাকার উন্নয়ন এবং গজুয়াকাটি খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলিম বলেন, আমরা গজুয়াকাটি খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এলাকাবাসী সুখবর পাবেন।
এ বিসয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, দুই ইউনিয়নবাসির দু:খ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে গজুয়াকাটি খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ব্রিজটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও মাটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। ৮০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে।
আশাশুনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা সোহাগ খান বলেন, গজুয়াকাটি খালে ব্রিজ নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় আছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ব্রিজ নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন থাকলেও এই মুহূর্তে এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য সাঁকোটি সংস্কার করা জরুরী। সাঁকোটি সংস্কারে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।