সরাইল পিডিবি অফিস সংলগ্ন বড়দেওয়ান পাড়ায় ৪ টি ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি দিয়েই চলছে সরবরাহের কাজ। খুঁটি ভেঙ্গে বা ক্যাবল ছিঁড়ে পড়ে যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। নতুন খুঁটি প্রতিস্থাপনের জন্য ওই গ্রামের গ্রাহকরা ৩ বছর ধরে ধরণা দিচ্ছেন অফিসে। কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। টাকা দিয়েও সেখানে মিলছে না খুঁটি। অথচ গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে সরাইলে চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। প্ল্যানের ধারে কাছেও নেই কাজ। যেখানে টাকা সেখানেই বসানো হচ্ছে খুঁটি। মোটা অংকের টাকায় দুটি হাওরে বসিয়েছেন দেড় শতাধিক খুঁটি। আর আবাসিক এলাকায় খুঁটি দিতে স্থানীয় পিডিবি’র বিরূদ্ধে ওঠেছে গড়িমশির অভিযোগ। গত মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। সরজমিনে দেখা যায়, সরাইল পিডিবি অফিসটি বড়দেওয়ান পাড়ায়। ওই পাড়ার প্রধান সড়কের পাশে সিমেন্টের তৈরী ৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝরাঝির্ন অবস্থা। একটি খুঁটিতে ১৫-২০ টি সার্ভিসের ক্যাবল ঝুলছে। খুঁটি গুলি হেলে রয়েছে। আবার দুই/একটি খুঁটি মাঝখানে ফাঁটা। সিমেন্ট ও পাথর খসে গেছে। যেকোন সময় খুুঁটি গুলি সড়কে পড়ে যেতে পারে। এতে করে পথচারি বা বাড়ির বাসিন্দারা গুরূতর আহত/ নিহত হতে পারে। এ ছাড়া যেকোন সময় অগ্নোৎপাতের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ৪টি খুঁটিই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। খুঁটি গুলি সরিয়ে নতুন খুঁটির জন্য পিডিবি অফিসে ঘুরছেন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। হচ্ছে, হয়ে যাবে, করে দিচ্ছি এমন বাক্য বলেই গত ৩ বছর ধরে ঘুরাচ্ছেন পিডিবি। কিন্তু হচ্ছে না কিছুই। একাধিক গ্রামবাসী জানায়, প্রকল্পে কর্মরত ঠিকাদারের সুপারভাইজার সোহেল। প্ল্যান নয় টাকায় বসিয়ে যাচ্ছেন খুঁটি। অফিসের ভেতরে ও বাহিরে তৈরী হয়েছে খুঁটি বিক্রির অনেক দালাল। দালালের মাধ্যমে না গেলে খুঁটি পাওয়া অনিশ্চিত। একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী এ পাড়ায় খুঁটি প্রতিস্থাপনের কথা বলেই পাড় করেছেন সময়। পাড়ায় ঘুরে গিয়ে নীরব সোহেলও। এদের চাওয়া শতভাগ পূরণ না হলে খুঁটি দিবেন না। বড়দেওয়ান পাড়ার বাসিন্ধা ও গ্রাহক মো. উজ্জ্বল ঠাকুর বলেন, সরাইলে সর্বোচ্চ লুটপাটের জায়গা হচ্ছে পিডিবি অফিস। স্থানীয় কিছু লোক মাষ্টাররোলে চাকরি নিয়ে এখন নেতা। এরা অফিসে সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করছে। এরা কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের সাথে মিশে দালালি করে থাকে। ফায়দা কম হলে কাজ করে না। বড়দেওয়ান পাড়ার ৪টি খুঁটি নিয়ে ওই দালাল সিন্ডিকেটটাই খেলছে। ধৈর্য্যরে বাঁধ ভাঙ্গলে গ্রাহকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। পাড়ার আরেক বাসিন্দা সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মাহবুব খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘উন্নয়ন প্রকল্প’ এর কাজ এখানে চলছে। বাজেট হচ্ছে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ‘ট্রেড পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি ঠিকাদারী ফার্ম সরাইলে কাজ করছেন। প্রকল্পের নিয়ম হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পুরাতন লাইনের সমস্যা বা কাজ আগে শেষ করতে হবে। এরপর নতুন কাজ। কিন্তু ঠিকাদারের লোক সোহেল ১০-২০ হাজার টাকা মূল্যে খুঁটি বিক্রি করছেন। পিডিবি আকাশি হাওরে দুটি ইরি স্কীমে বসিয়েছেন অর্ধশতাধিক খুঁটি। আর শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়ায় এলাকায় হাওরে উন্নয়ন প্রকল্প ৩-৪টি স্কীমে অর্ধশতাধিক খুঁটি। বাতির নীচেই কেন অন্ধকার? বড়দেওয়ান পাড়ার ৫ শতাধিক গ্রাহকের পুরাতন লাইন ও ঝরঝির্ন খুঁটির জন্য কেন ৩ বছর ঘুরতে হবে? কত টাকা লাগবে বলেন? তারপরও আমাদের খুঁটি গুলি বসিয়ে দেন। বিশিষ্ট মুরব্বি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেন, কি করলে যে পাড়ায় খুঁটি বসবে ও ঝুঁকিমুক্ত হবে বুঝতে পারছি না। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত বাবু থেকে শুরূ করে মাঈন উদ্দিন জুয়েল, নওয়াজ আহমেদ খান ও সামির আসাব সকলের কাছেই ধরণা দিলাম। দুই বছর শুধু আশ্বাস আর সময় চেয়েই শেষ। সোহেলও ঘুরে দেখে গেছেন। খুঁটি আর পেলাম না। পাড়ার গ্রাহকরাও এখন হতাশ। ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে হাওরে খুঁটি বসে যায়। আর অফিসের কোণায় ৩ বছরেও বসে না। আসলে আমরা অভাগা। ধন্যবাদ সরাইল পিডিবিকে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সুপার ভাইজার মো. সোহেল মিয়া নিয়ামতপুর এলাকায় স্কীমে ২৫-৩০ টি খুঁটি বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, অবশ্যই পুরাতন সমস্যার গুরূত্ব বেশী। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ড্রইয়িং এর বাহিরে কাজ করতে হয়। বড়দেওয়ান পাড়ায় দুটি খুঁটির অবস্থা খুবই খারাপ। খুঁটি উদ্ধার করে কাজটি করে দিব বলেছি। ‘ল’ বুল্টেজের সমস্যাও সমাধান করে দিব। একটি ট্রান্সমিটার স্থাপনের চিন্তাও আছে। সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) এ জেড এম আনোয়ারূজ্জামান বলেন, আকাশি হাওরে নিয়ম নীতি যথাযথ ভাবে অনুসরণ করেই তৎকালীন কর্মকর্তা খুঁটি বসিয়েছেন। বড়দেওয়ান পাড়ার খুঁটির সমস্যার বিষয়টি আমার জানা নেই।