প্রচন্ড তাপদাহে জনজীবনে নাভিশ্বাস চলছে। ফলে কিছুটা স্বস্থি পেতে মানুষের এখন ভরসা হাতপাখা। আর এ হাতপাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পারিয়াট গ্রামের কারিগররা। সারা বছর তারা তালৈর পাখা তৈরি করে থাকে ফলে বাতাস বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। উপজেলার পারিয়াট গ্রামের পাখা পল্লীর প্রায় সব বাড়িতেই ছায়াযুক্ত জায়গায় পরিবারের সদস্যরা গোল করে বসে কেউ পাতা কেটে সাইজ করছেন, কেউ নিপুণ ভাবে সেলাই করছেন, কেউ সুতা ও বাঁশের শলায় রঙ লাগিয়ে নকশা করছেন। কেউ তৈরি করা পাখা বাজারজাত করতে বোঝা বাঁধছেন। আবার কেউ পাইকারি ক্রেতাদের সঙ্গে বকেয়া হিসাব ও আপ্যায়নে ব্যস্ত রয়েছেন।
তালপাখার কারিগর আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা পাখা তৈরির কাজ করতেন। তাদের পেশাটাকে ধরে রাখতে কাজ করছি। তিনি প্রায় ২০ বছর ধোরে পাখা তৈরি করছেন। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ পরিবার তালপাখা তৈরির পেশায় রয়েছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা ছোটবেলা থেকে বড়দের কাজে সাহায্য করতে করতে তারাও নানান নকশার পাখা তৈরিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বছরের চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এ তিন মাস পাখা বিক্রির মৌসুম ধরা হয়। আবহাওয়া ঠান্ডা হলে অথবা শীত আসলে বিক্রি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তিন মাসের রোজগারের পয়সায় সারা বছর চলতে হয় তাদের। এলাকাতে এখন আর তালপাতা পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমে পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা ফরিদপুর ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তালগাছের পাতা কিনে রোদে শুকিয়ে পাতা মজুদ করে রাখা হয়। পাতা সংগ্রহের সময় তারা ২০/২৫ করে বাইরে থেখে পাতা ক্রয় করে আনেন। প্রতিটি পাতা ৫ টাকা করে ক্রয় করেন। প্রয়োজন মতো পাতা ঘর থেকে বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখে বেশ কয়েকদিন। পাতা নরম হলে তা গোলাকার সমান করে কেটে পাখা তৈরি করে থাকে। একটি পাতা থেকে ২/৩ টা পাখা তৈরি করা যায়।
প্রচন্ড তাপদাহ আর রাতের ভ্যাপসা গরমে পাখার ব্যাপক চাহিদা হয়ে থাকে। গ্রামের সব বাড়িতেই পাখা তৈরি করা হয়। যে কারণে তালপাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ পারিয়াট গ্রামের পাখা পল্লী থেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আশপাশের অনেক জেলার পাইকাররা এসে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। গরম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে তালপাখার তৈরির কাজ করে থাকে কিন্তু শীত মৌসুমে বিক্রি হয় না। যে কারণে শীতের সময় পাখা তৈরি করে মজুত করে রাখে। এ বছর প্রতিটি পাখায় তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও খুচরা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। একজন কারিগর প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ টি তালপাখা তৈরি করতে পারেন। আবার যারা পাখায় শলা বাধে তারা ৫০ থেকে ৬০ টি পর্যন্ত বাধতে পারে। এ এলাকার পাখা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহি,যশোর,মাগুরা, ভাটইবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়িরা কিনে নিয়ে যায়। জন্মগত ভাবে এ পেশাটাকে পেয়ে থাকে বলেই তাদের ছেলে মেয়েরাও বিভিন্ন নকশার পাখা তৈরিতে পারদর্শী। পাখা কারিগর জানায়, হাত পাখার তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা এই এলাকাতে পাওয়া যায় না। তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পানি থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান থেকে দু’খন্ড করেন। সারা বছরই এরা পাখা তৈরি করে থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজে ব্যাস্থ থাকে।