বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সরকারী অধিকাংশ পুকুর পুনঃখননে অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক নিয়মে কাজ করার জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, ভু-উপরস্থ পানি ব্যাবহারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ভরাট হয়ে যাওয়া জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সরকারী পুকুরগুলোর পানি সুপেয় হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে ভরাট হওয়া পুকুর পুনঃখননের কাজ চলছে।
সে মোতাবেক ২০২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় ১৩টি পুকুর দুইটি প্যাকেজে টেন্ডার এর মাধ্যমে পুনঃখনন করে সাইডের রাস্তায় ইটের সলিং সিমেন্টের ব্যাচ ঢালাই পিলার ও তার পার্শ্বে তার কাটার বেড়াসহ ১টি বৃহৎ আকারের ফিল্টার স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এজন্য দুই প্যাকেজে পৃথক পৃথক টেন্ডার আহবান করা হয়। প্রথম প্যাকেজে আনুমানিক দুই কোটি ৭ লক্ষ এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে দুই কোটি ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ হয়। গোপালগঞ্জের মনির ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাশন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পেয়ে ১৩টি পুকুর পুনঃখননের কাজ শুরু করেন। ১৩টি পুকুরের মধ্যে প্রায় ৭টি পুকুরের পাড়, ইটের সলিং, বাউন্ডারী পিলারসহ তার কাটার বেড়া ভেঙ্গে পুকুরের মধ্যে উপড়ে পড়ে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, পুকুর খননের সময় যথাযথ নিয়ম কানুন না মানার কারণে পুকুরের পাড় ভেঙ্গে পুকুরের মধ্যে চলে গেছে। তাছাড়া সিমেন্টের পিলারে ব্যাচ ঢালাই না দিয়ে দায়সারাভাবে পিলারগুলো স্থাপন করায় তা মাটির নিচেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। নিয়ম অনুযায়ী সঠিক কাজ করা হয়নি। যে কারণে পুকুর খননের কাজ মাঝামাঝি সময় যেতে না যেতেই ধসে পুকুর গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড় সংলগ্ন ঘোষপাড়া এলাকার তালপুকুর খননে ব্যাপক অনিয়ম ও আনুষঙ্গিক কাজে নি¤œ মানের কাঁচামাল দিয়ে নির্মাণের অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। সংরক্ষিত এই পুকুরে গোসল করা, কাপড় কাচা, হাত পা ধোয়া এবং মাছ চাষ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও চারপাশে কাঁটা তার বেষ্টিত সীমানা নি¤œমানের মালামাল দিয়ে তৈরি করার ফলে অনেক জায়গা পিলার নুয়ে নষ্ট হওয়ায় পুকুরে চুরি করে জাল দিয়ে মাছ ধরা ও গবাদিপশুর অবাধ বিচরণের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
পুকুরের চারপাশে সদ্য ওঠানো মাটির উপর ইটের হেরিংবোন দিয়ে তৈরি হয়েছে রাস্তা। রাস্তা নির্মাণের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী তৈরি হয়েছে।
সিডিউল অনুযায়ী সীমানা প্রাচীরে কাঁটাতার লাগানোর জন্য যে ধরনের পিলার ব্যবহারের কথা ছিল সেখানেও হয়েছে দুর্নীতি। প্রতিটি পিলারের নিচের অংশে অর্থাৎ মাটির পাদদেশে স্কয়ার স্লাব বিশিষ্ট পিলার হওয়ার কথা থাকলেও লাগানো হয়েছে সোজা পিলার। ফলে অল্প বৃষ্টি আর গবাদি পশুর ধাক্কায় অধিকাংশ পিলার নুয়ে পড়েছে। এদিকে রাস্তা তৈরির জন্য ব্যবহৃত নি¤œমানের ইট এবং বালির পরিমাণ কম দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
এলাকার বিশিষ্ট জনের মধ্যে অধ্যাপক মুরারী মোহন পাল জানান- তিনি বহুবার নি¤œমানের মালামাল এবং অনিয়মের জন্য কাজে বাধা প্রদান করেছেন। কিন্তু ঠিকাদার তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যান। তখন বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন দাস সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করেন। আবারও অদৃশ্য ক্ষমতা বলে ওই ঠিকাদার তার কাজ চালিয়ে গেছেন।
এছাড়া শুভদিয়া ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামে অবস্থিত জেলা পরিষদের মালিকানাধিন পুকুরটির দুই পার্শ্বে সদ্য নির্মাণাধীন ইটের সলিং পিলার তার কাটার বেড়া নিয়ে জয়াল ধরে পুকুরের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে। মানসা-বাহিরদিয়া ইউনিয়নের লালচন্দ্রপুর গ্রামে অবস্থিত জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুকুরটির একই অবস্থা বিরাজ করছে এবং পাইকপাড়া দাউদ আলীর বাড়ির পার্শ্বে, মৌলভী পাড়ায় ও পাগলা শ্যামনগর দুইটি পুকুরসহ প্রায় ৭টি পুকুরে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, পুকুর পুনঃখননে পুকুর চুরির মত ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও তাদের অবহেলা ও উদাসিনতার কারণে এমন হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।ফকিরহাট উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।