রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় শুধু তারিখ বসিয়ে ফাঁকা রশিদে ট্রাক থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বালুবাহি ট্রাক থেকে এই অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এতে ট্রাক মালিক, বালুর গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে টোল আদায়কারি ও কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, রাজশাহীর শ্যামপুর এলাকার বালুমহাল থেকে বালু পরিবহনের ট্রাকে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দিয়েছে কাটাখালি পৌরসভা। সরকারিভাবে ট্রাক প্রতি টোল ৫০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও পৌরসভা সেটি বাড়িয়ে ২০০ টাকা করেছে। কিন্তু ইজারাদার ফাঁকা রশিদ দিয়ে টোল আদায় করছে ট্রাক প্রতি ৩০০ টাকা করে। প্রতিদিন এই শ্যামপুর বালুমহালে যাওয়া আসা করে এক থেকে দেড়শো ট্রাক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাক চালক বলেন, এক ট্রাক বালু পরিবহন করে চার-পাঁচশো টাকা লাভ হয়। সেখান থেকে তিনশো টাকা দিলে তো কিছুই থাকে না। তাই ট্রাকের ট্রোল এখন বালু ব্যবসায়ীদের উপর চাঁপানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ইজারাদাররা যা চাই তাই দিতে হয়। প্রতিবাদ করলে ট্রাক আর বালুমহালে যেতে দিবে না। এছাড়াও চালকদের মারধরও করে তারা। ফলে তাদের কেউ কিছু বলে না।
এছাড়াও প্রায় ৩০ বছর ধরে বালুর ব্যবসা করছেন মহানগরীর কাজলা এলাকার অক্ট্রয় মোড়ের মো. ইদুল ইসলাম। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, বালু বিক্রি করে প্রতি ট্রাকে লাভ থাকে ৫০ থেকে দেড়শো টাকা। কিন্তু শ্যামপুর বালুমহালে ট্রাক থেকে অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে নেয়ার কারণে সেই লাভ থাকছে না।
তিনি আরও বলেন, বালুর দাম বর্ষার সময় বৃদ্ধি পায়, আবার স্বাভাবিক মৌসুমে বালু পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠলে দাম কমে। কিন্তু টোল কোনো মৌসুমেই কমে না। এবার ইজারাদার ইচ্ছামত টোলের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন লাভ হয়নি।
অপর বালু ব্যবসায়ী শুকুর আলী বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন বিল্ডিং খুঁজে খুঁজে বালুর কাস্টমার খুঁজি। তারপর তাদের বালু সাপ্লাই দেই। এতে ট্রাকপ্রতি আমার লাভ থাকে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো। কিন্তু এই অতিরিক্ত টোল দিতে গিয়ে এখন আর লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিনা। ফলে টোল বাড়ানোতে আমি আর বালু সাপ্লাই দিতে পারছি না। আগের অর্ডারও বাধ্য হয়ে বাতিল করেছি।
সরকার নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে টোল আদায়কারী ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ট্রাক একবারেই কমে গেছে, তাই টোল আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নদীতে পানি নামলে এবং বালু আবার উঠতে শুরু করলে আবার কমিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ আব্বাস আলী বলেন, টোল আদায়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। এ নিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সেখানে একটি বাজে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই টোল আদায়ের বিষয়টি আমাকে না জানিয়েই সেখানকার ইজারাদাররা অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে টোল আদায় করছেন। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে বসে একটি পদক্ষেপ নেয়া হবে।