কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় আড়াই লাখ অধ্যুষিত মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র। এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, সার্জারী ও এনেস্থেশিয়া ডাক্তারের অভাবে ওটির সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। টেকনিশিয়ানের অভাবে নষ্ট হচ্ছে এক্সরে মেশিন। বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম ও রংপুরে ছুটে যাচ্ছে রোগীসহ রোগীর অভিভাবকদের। খেটে খাওয়া মানুষের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
পশ্চিমে তিস্তা ও পূর্বে ধরলার দুইদিক থেকে চাপ দিচ্ছে ভাঙন নামের রাক্ষুসী নদী। গড়ে উঠেনি শিল্প-কলকারখানা। ফলে এ উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া আজো লাগেনি। পিঁছিয়ে পরা এ উপজেলার নাম রাজারহাট। এ জনপদের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র এবং কৃষি নির্ভর। প্রাকৃতিক দূর্যোগ অভাব আর অসুখ তাদের পিছু ছাড়ে না। তবুও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে অবিরাম চেষ্টা করতে হয় তাদের। অসহায় প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পরবর্তী তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালে অত্র অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এরই মধ্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বহুকিছুর সংযোজন ঘটলেও রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি তার বেশিরভাগ সুবিধাই অর্জন করতে পারেনি। ৬ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের জায়গায় রয়েছে ১ জন, ৫ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে রয়েছে ২ জন । গাইনী-হার্ট ও অর্থপেটিক্সসহ নেই সার্জারী ডাক্তার। উপজেলার একমাত্র চিকিৎসা সেবার এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন ইনডোরে রোগী ভর্তি থাকে ৫০-৬০ জন এবং আউট ডোরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন ২০০-২৫০ জন রোগী তার মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশু অন্যতম। ২০০৫ সালে একটি এক্সরে মেশিন বরাদ্দ দেয়া হলেও উপযুক্ত কক্ষ ও রেডিওলজি ডাক্তারের পদ না থাকায় বাক্স বন্দি অবস্থায় সেটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও অ্যানালাইজার মেশিন আছে কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয়নি সনোলজিস্ট। তাই সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে আগত রোগীরা। সাধারণ পরীক্ষাগুলোও করতে বাধ্য হয়ে শহরমুখী গুণতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্যাথলজি বিভাগ থাকলেও গুরুত্বপুর্ণ পরীক্ষা করা সম্ভব হয়না এখানে। যেমন- ব্লাডকালচার, ইলেকট্রোলাইট, হরমন এনালাইসিস, ইউরিনকালচার। সার্জারীর কোনোরকম পেয়ার না থাকায় সার্জারীর কক্ষ থাকলেও হয়নি কোন অপারেশন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এনেস্থেশিয়া মেশিনসহ অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জামাদী। চিকিৎসা নিতে আসা ছিনাই ইউনিয়নের ছত্রজিৎ এলাকার আঃ জলিল (৬৫) প্রচন্ড পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসলে আলট্রাসনোগ্রাম বিশেষজ্ঞ না থাকায় তাকে কুড়িগ্রামে রেফার্ড করা হয়। পরবর্তীতে সে ধার-দেনা করে শহরে এক ক্লিনিকে ভর্তি হয়। অপরদিকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে রামহরি মৌজার কৃষ্ণ কান্ত রায় (৪০) হাতভাঙ্গা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসে অর্থপেটিক্স ডাক্তার ও রেডিওলজি ডাক্তার না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়ির একমাত্র সম্বল গরু বিক্রি ও ধার-দেনা করে কুড়িগ্রামে এক ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর আরএমও ডাঃ নুরুনবী আনছারী জানান, আড়াই লাখ মানুষের মধ্যে কোভিড১৯ এ উপজেলায় টিকা গ্রহনের জন্য ৪৪হাজার ১০৯জন অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ১৯হাজার ৪৬১জন টিকা নিতে পারেননি। নমূনা দিয়েছেন ৯২২জন, এর মধ্যে ২৯০জন পজেটিভ, পিসিআর পজেটিভ ২০৬জন, রেপিড এন্টিজেশন পজেটিভ ৮৩জন। মারা গেছে ২জন ও সুস্থ্য হয়েছে ২৭০জন। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়েছে ৯হাজার ৩০০জন, সিনোফাম ভ্যাকসিন নিয়েছে ২৭হাজার ৪৪০জন।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, এলাকার মানুষজন খুবই দরিদ্র। সরকারি এ হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নেয়ার জন্য আর কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। এরই মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন পূর্বে একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন পেয়েছি। আশা করছি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় বাকী সমস্যাগুলোও সমাধান হবে।